গত তিনদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এলাকা প্লাবিত, বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতারা এ খবর জানান।
দিন-রাত বৃষ্টি, চরম ভোগান্তি
খুলনা ব্যুরো : অবিরাম বৃষ্টিতে খুলনা শহরসহ বেশির ভাগ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
নগরবাসীর অভিযোগ, নগরীর সড়ক, ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজসহ উন্নয়নকাজের ধীরগতিতে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। নগরী ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাটের ড্রেন উপচে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্টে পড়েছে দিন মজুর।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে বেশ কিছু উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে শত শত মাছের ঘের। লাগাতার বৃষ্টির জের এবং দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে খুলনা সদর সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের একতলা ভবনের রুমের ছাদ ভেঙে পরেছে। বহু পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমের ছাদ ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত হলো বেশকিছু বালাম বই। বইগুলো সম্ভবত: ১৯০০ সালের আগের বলে মনে করছেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সোমবার (৭ জুলাই) দিবাগত রাতের যে কোন সময় ছাদ ধ্বসে পড়লেও গত মঙ্গলবার সকালে অফিসে গিয়ে এটি দেখতে পান সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে জেলা রেজিষ্ট্রার, জেলা প্রশাসক, গণপূর্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রেকর্ড কীপার মাহবুবুর রহমান বলেন, রেকর্ড রুমের ভবনটি অনেক পুরাতন। এটি সংস্কারের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও হয়নি। ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন করার জন্য ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়টি নতুন করার জন্য আগে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। টেন্ডার পর্যন্ত হয় এমনটিও শুনেছি। কিন্তু আগের সরকার ভবন নির্মাণ করতে পারেনি। এখন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই কাজ করা হবে। ’
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে খবর পেয়ে ছাদ ধ্বসে পড়া ভবনটি পরিদর্শন করেছি। অনেক পুরাতন ভবন। মূলত: ছাদ ধ্বসে পড়েনি, ছাদের ওপর একটি গম্বুজের মতো ছিল সেটি ধ্বসে পড়ে। যার ব্যাসার্ধ দুই মিটারের মতো। তবে যে পরিমানে ধ্বসে গেছে সে পরিমানে বালাম বইয়ের ক্ষতি হয়নি। ধীরে ধীরে সেগুলো সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর ধ্বসে পড়া স্থানটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোন ভবনে বালাম বইগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চুন আর সুরকি দিয়ে বিট্রিশ আমলের তৈরি ভবনটিতে জেলা ও সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস হিসেবে আলাদা আলাদা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভবনটি বহু আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছিল গণপূর্ত বিভাগ। জরাজীর্ণ ভবনটির ছাদ এর আগেই কয়েকবার ধ্বসে পড়েছিল। বিভিন্ন সময় ছাদের অংশ ভেঙে পড়ায় কয়েকজন আহতও হয়েছেন। মাঝে মধ্যে সংস্কার করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উল্লেখ্য, খুলনা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে এমন খবর এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল। পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের জন্যও আবেদন জানানো হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
এদিকে ভারী বর্ষণে উপকূলের কয়রা-পাইকগাছার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে হাজার হাজার মৎস্য ঘের। বেড়েছে জনদূর্ভোগ। উপজেলা কৃষি অফিস ও আদালত চত্তরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে একটানা দুই বার ভারী বর্ষণে কয়রা-পাইকগাছার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বছর আষাড় মাসের প্রথম থেকে একটানা গুড়ি গুড়ি, হালকা ও ভারি বৃষ্টি লেগে আছে। এতে আমন ধানের বীজ তলা, সবজি ক্ষেত, মৎস্য লীজ ঘের, নার্সারী, পুকুর, বাগান, রাস্তা ও বসতবাড়ী তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পাইকগাছার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলী উঁচু এলাকা হলেও বাকি ৬টি ইউনিয়ন নিচু এলাকায় অবস্থিত। সামান্য বৃষ্টি হলে এ সকল এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তবে গত দিনের ভারি বর্ষণে উঁচু এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর বাজারের সোনা পট্টি, মাছ বাজারসহ বিভিন্ন রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ রাস্তাগুলি পানিতে তলিয়ে থাকে। বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে থাকায় সাধারণ মানুষ বিড়াম্বনায় পড়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শ্রমজীবী মানুষরা কাজে যেতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়ে আর্থিক অনাটনের মধ্যে পড়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন গদাইপুরের কয়েকশ’ নার্সারি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেত ও আমন ধান ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিতে মানুষের জনদূর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
পাইকগাছা মেইন সড়কের গোলাবাটি, সলুয়া, নতুন বাজার ও জিরো পয়েন্ট এলাকার ভাঙ্গা রাস্তা আরও ভেঙ্গে ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন জানান, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এলাকা প্লাবিত হয়ে আমন ধানের বীজ তলা তলিয়ে গেছে ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের উপসহকারি কর্মকর্তারা ইউনিয়নে কাজ করছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই প্লাবিত এলাকার পানি সরে গেলে আমন ধানের চারার তেমন ক্ষতি হবে না। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার সৈকত মল্লিক বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় এক হাজার পুকুর ও প্রায় তিন হাজার ছোট বড় ঘের তলিয়ে গেছে। যদি আবার এখন ভারী বৃষ্টি না হয় তাহলে অতিদ্রুত পানি সরে যাবে। এতে কোটি টাকার মাছ চলে যাবে। এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি নিঃস্কাশনের জন্য নদীর স্লুইস গেটগুলি উন্মুক্ত রাখাসহ বিভিন্ন পানি নিঃস্কাশনের ড্রেনগুলি পরিস্কার করার জন্য টিমগুলি কাজ করছে।
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন
শরীয়তপুর সংবাদদাতা : টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে শরীয়তপুরের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পৌরসভার অনেক নিম্মাঞ্চলের অনেকের বসত ঘরেও ঢুকে পড়েছে জমে থাকা বৃষ্টির পানি। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সামনে পানি জমে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌচেছে। সিভিল সার্জন অফিসের সামনে হাঁটু পানি জমে নিচতলায় পানি ঢুকে পরায় কর্মচারীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। সড়কে যানবাহন চলাচল করছে তুলনামূলক কম। স্কুল কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল খুবই কম। ব্যবসা বানিজ্যেও পড়েছে বিরুপ প্রভাব।
পৌর নাগরিকদের দাবি জেলা শহরে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অধিকাংশ খাল ও জলাশয় ভরাট করে ফেলায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকার কারণে সব এলকায় এখনও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যে সব এলাকায় জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে ওই সব এলাকায় পৌরবাসীর কথা মাথায় রেখে শ্রমিকদের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গত সোমবার বিকেল থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত সারাদেশের মত শরীয়তপুরেও অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ভারি আবার কখনো মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা এই বৃষ্টিতে পৌরসভার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না তেমন একটা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। তারা কর্মহীন হয়ে পড়ায় দুঃশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মাঠ, সিভিল সার্জন অফিস, শরীয়তপুর মডেল টাউনের পশ্চিম পাশের্^ চর পালং এলাকার কয়েকটি বাড়ির ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পরেছে। পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচড়া, পুরাণ হাসপাতাল রোড, ভূমি অফিসের উত্তর পাশ দিয়ে পাহাড় বাড়ি রোড, তুলাসার, নিরালা আবাসিক এলাকা, শান্তিনগরও বেপারী পাড়াসহ পৌরসভার নিম্মাঞ্চলগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিসের জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক এম এম হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ভবনের কোন দিক দিয়ে পানি নিষ্কানের ব্যবস্থা নেই। ভারি বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতা দেখা দেয়। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সিভিল সার্জন অফিসের নিচ তলায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে আমাদের অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, পৌরসভার ড্রেনেজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ না থাকা আমরা এখনও প্রতিটি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে পারিনি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও খাল ভড়াট করার কারণে শহরের কিছু নিঁচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার পালং স্কুল থেকে শাবনূর মার্কেট ও চৌরঙ্গী থেকে মারকাজ মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সেই ক্ষেত্রেও ড্রেন করার জন্য কিছু কিছু বাড়ির মালিকরা বাঁধা দেওয়ায় ড্রেন করতে বেগ পেতে হয়। পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের জন্য ১০ জন শ্রমিক সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রাস্তায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করছেন। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই জলাবদ্ধতা দুর করা সম্ভব হবে।
বড়লেখায় নিকড়ী ছড়ার পাড়ে ভাঙন চরম দুর্ভোগে অর্ধশত পরিবার
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে নিকড়ী ছড়ার পাড়ে ভাঙন দেখা দেখা দিয়েছে। এতে চলাচলের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অর্ধশত পরিবারের লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ছড়ার ভাঙন রোধে ও তা দ্রুত মেরামতের দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা সম্প্রতি বড়লেখা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন।
লিখিত আবেদন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ও বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বুক চিরে বয়ে যাওয়া নিকড়ী ছড়া মিশেছে হাকালুকি হাওরের সঙ্গে। এই ছড়ার এক পাড়কে বড়লেখা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পানিধার গ্রামের অর্ধশত পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন। নিকড়ী ছড়াটি একসময় অনেক প্রশস্ত ছিল। ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নেমে যেত। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা ছড়ার বিভিন্ন স্থানে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও ভরাট করেছেন। এতে ছড়াটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ছড়ার খনন না হওয়ায় পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ছড়া উপচে আশেপাশের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে ঢুকে পড়ছে। এতে স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বড়লেখা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বুধবার বিকেলে বলেন, নিকড়ী ছড়ার ভাঙনের বিষয়টি জেনেছি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি পৌরসভার মাসিক সভায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেনীর ৩ নদীর বাঁধে ভাঙন প্লাবিত ৩২ গ্রাম
ফেনী সংবাদদাতা : টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পানির স্রোতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৫টি স্থান ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হাজরো পরিবার। এছাড়া সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নি¤œাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-মাছের ঘের এবং খেত-খামার পানিতে ডুবে গেছে।
বুধবার জেলা আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্যমতে, ফেনীতে ৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।যা অতীতের বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ স্টেশনে ৮ জুলাই সকাল ৬টায় পানির লেভেল ৬.৯৭ মিটার, রাত ৮টায় ১৩.৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার, এই সময়ে প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারত বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলগোনায় ২টি, উত্তর শালধর ১টি, নোয়াপুর ১টি, পশ্চিম অলকা ১টি, ডি এম সাহেবনগর ১টি , পশ্চিম গদানগর ১টি , দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া ১টি, পূর্ব সাতকুচিয়া ১টি, উত্তর টেটেশ্বর ১টি সহ ১০টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় দেড়পাড়া ২টি, শ্রীপুর ১টি, উত্তর দৌলতপুর ১টি , কমুয়া ১টি সহ ৫টি ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবশেষ সকাল ৯টায় পানির লেভেল ১৩.৩১ মিটার ছিল।
ফুলগাজী বাজার রক্ষা বাঁধ উপছিয়ে পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করে সমগ্ৰ বাজার এবং তৎসংলগ্ন রাস্তা সমূহ পানিতে নিমজ্জিত। ব্যবসায়ীদের লাখলাখ টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। ফেনী পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সিলোনীয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সুবারবাজারের মেলাঘর রাস্তার মাথায় তিনফুট পানি।
ইসলামী ছাত্রশিবির বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ‘কুইক রেসপন্স’ টিম গঠন করেছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে জেলার বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ ও ফেনীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, সদর উপজেলা ও সোনাগাজী, পরশুরাম এবং ফুলগাজীর অনেক বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার এবং সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বৈদ্যুতিক পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে এর পরিধি বাড়তে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
ফেনী শহরে পানি কমেছে।প্রধান প্রধান সড়ক গুলো থেকে পানি নেমে গেলেও পাড়া মহল্লা,অলিগলি এখনো পানির নিচে। পৌর প্রশাসক তার পুরো টিম নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত বছরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবারো বন্যার পানিতে স্বপ্ন ডুবছে।
ফুলগাজীতে ৪টি নদীর ৯টি স্থানে ভাঙন ও ২০টি গ্রাম প্লাবিত
ফুলগাজী সংবাদদাতা : টানা ৩ দিনের ভারীবর্ষন ও সীমান্তবর্তী বল্লামুখার ভারতীয় ১টি অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে পরশুরাম- ফুলগাজী উপজেলা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ফুলগাজীর ছোট বড় চারটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৯টি স্থানে ভাঙন ও প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
গত মঙ্গল ও বুধবার ফুলগাজী উপজেলা মুহুরী নদীর দেড়পাড়ায় বেড়ীবাঁধের ২টি ভাঙন, উত্তর শ্রীপুর ২টি, কহুয়া নদীর ১টি স্থান, সিলনীয়া নদীর কমুয়া, তারালিয়া ও নোয়াপুর অঞ্চলে ৪টি, আমজাদ হাটে ১ ও গতীয়া নদীর ১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে তীব্র স্রোতে লোকালয় প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ফুলগাজী উপজেলায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দেড় হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এসকল আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও সদর ইউনিয়নে ২টি কেন্দ্রে রান্না করা খাওয়া সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও বিএনপি, জামায়াত ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার ও ত্রান কার্যক্রমে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার। মঙ্গলবার বুধবার বিকেল ৪ টার পর ১৩.৪০ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে জলজট ॥ পাহাড়ধসের সতর্কতা
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে টানা বর্ষণে জনজীবন ব্যহত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে ও কখনো অঝোর ধারায় অব্যাহত রয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নগরীর জিইসি মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট ও আগ্রাবাদসহ কিছু এলাকায় সড়ক ও অলিগলিতে পানি জমে গেছে। বৃষ্টির কারণে সকালে কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে ভোগান্তি হয়েছে। বিশেষ করে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম জানান, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং তা আরও এক-দুইদিন চলতে পারে।
এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু প্রবল হওয়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, ঢাকা ও খুলনা মহানগরীতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি বড় প্রকল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ চলছে। তবে এসব প্রকল্পের অগ্রগতি ও ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে লক্ষণীয় পার্থক্য। সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হলো ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’, যার ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চলছে দ্বিতীয় প্রকল্প ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’। এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৪৭ কোটি টাকার বেশি। তৃতীয় প্রকল্পটি ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২ হাজার ২৪২ কোটি টাকা ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চতুর্থ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ‘বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এই বিপুল ব্যয়ের পরও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না-এটাই নগরবাসীর বড় হতাশা।
নোয়াখালী সংবাদদাতা : টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে বহু বীজতলা মাছের প্রজেক্ট ভেসে গেছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলোতে ইতোমধ্যে কোমর / হাটু সমপরিমাণ পানি উঠেছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে নিচতলার বেশিরভাগ বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ জনগণ। শত-শত দিনমজুর বেকার হয়ে গেছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জেলায় ১ দিনে পানি বেড়েছে মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার। তবে পানি এখনো বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছর নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যার পরও দীর্ঘ এক বছরে নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ঢাকতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এ দাবি করছে।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নোয়াখালী জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেক বীজতলা, ফসলি জমি ও মাছের ঘের ইতোমধ্যে ডুবে গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃষ্টি বন্ধ না হলে আগামী পাঁচ দিন আরো পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, এসপি অফিস, আলফারুক একাডেমি, নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী জিলা স্কুলসহ, শহরের প্রতিটি স্কুল আঙ্গিনায় হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত। গতকাল নোয়াখালীতে ৪টি উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হলেও আজ সকাল থেকে সকল উপজেলায় আগামী শনিবার পর্যন্ত অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ও পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। জেলার শতশত দিনমজুর বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
নোয়াখালী পৌর শহরের স্টেডিয়ামপাড়া, জেলখানা সড়ক এলাকা, ফকিরপুর, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিংসহ বেশিরভাগ এলাকার সড়কগুলোয় পানি বৃদ্ধির কারণে ও দীর্ঘদিন ভাঙা সড়কগুলো সংস্কার ও মেরামত না করায় খানা-খন্দকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, বন্যা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় ইউনোদের নিয়ে মিটিং করছেন এবং সকল দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছন জরুরী ভাবে ৫০ মেট্রিক টন চাল দেড লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, মেডিকেল টিম গঠন করেছেন, এছাড়া জরুরি মুহূর্তে জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যাতে বন্যা দুর্গতরা আশ্রয় নিতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা জামায়াতের বিবৃতি : নোয়াখালী জেলা জামায়াতের আমীর ইসহাক খন্দকার ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা বোরহান বন্যাদূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানান। জামায়াতের জনশক্তিকে জনদুর্ভোগ লগবে স্থানীয় ভাবে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
আশাশুনি(সাতক্ষীরা)সংবাদদাতা: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় সাতদিনের টানা মুষলধারায় বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা হয়েছে। জনবসতি,মৎস্য ঘের,সবজি ক্ষেত,স্কুল,কলেজ,অফিস আদালত,খেলার মাঠ জলমগ্ন ও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধ হুমকীর মুখে পড়েছে।
উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নিচু এলাকার বসতবাড়ি, রান্নাঘর,গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। চরাচলের রাস্তা তলিয়ে যাওয়াত যাতয়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নাগরিক জীবন এখন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে। উপজেলা শোভনাল,বুধহাটা,কুল্যা, দরগাহপুর,বড়দল,আশাশুনি সদর,শ্রীউলা,খাজরা, আনুলিয়া,প্রতাপনগর,কাদাকাটি ইউনিয়নের অধিকাংশ নি¤œাঞ্চলের ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মাছের ঘেরগুলোর বাঁধ বহু স্থানে তলিয়ে গেছে,কিছু কিছু এলাকায় ডুবুডুবু করছে। ঘের মালিকরা ঘের রক্ষা করতে বাঁধের উপর দিয়ে নেটজাল টানিয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নৈকাটি গ্রামের জামায়াত নেতা মাও: মোশাররফ হোসেন বলেন,আমি অনেক জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বুধহাটা বিলের পানি সরানোর জন্য পেট্রোল পাম্পের কাছ থেকে খালের পলিমাটি অপসারন করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। বুধহাটা,নওয়াপড়া, শ্বেতপুর,মহেশ্বরকাটি,বেউলা এলাকার পানি গুড়গুড়ি দিয়ে মরিচ্চাপ নদীতে ফেলানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিত মজুমদার জানান, উপজেলার বেশীর ভাগ মৎস্য ঘের বৃষ্টির পানিতে হুমকীর মধ্যে রয়েছে। অনেক ঘের তলিয়ে গেছে। ঘের মালিকরা ঘেরের বাধের উপর দিয়ে নেটজাল টানিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া রোধে কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। হুমকীতে থাকা বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আশাশুনি বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খনন,খাল খনন,কালভার্ট নির্মান কাজ চলছে। এজন্য এলাকার পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নি¤œ অঞ্চল জলমগ্ন হচ্ছে। দুর্যোগ কাটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।