বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর, মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দলীয় চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। মনোনয়নের নামে দলীয় যেই চাঁদাবাজি হয় সেটির সুযোগ থাকবে না। ফলে নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ হবে। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। প্রতিটি ভোট মূল্যায়িত হবে।
তিনি বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে দেখা যায় মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে একজন প্রার্থী বিজয় হয়, অপরদিকে ১ ভোটের ব্যবধানে লাখ-লাখ ভোট নষ্ট হয়েছে। লাখ লাখ ভোটারের মতামতের কোন গ্রহনযোগ্যতা থাকে না। তাই প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে সত্যিকারের জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না, জনগণের সরকার গঠিত হয় না।
রবিবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলার উদ্যোগে ‘জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনসহ ৫ দফা’ দাবিতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান পূর্বক ডিসি অফিসের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, জুলাই সনদ মানুষের মুক্তির সনদ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সনদ। তাই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করার এই ৫ দফা বাস্তবায়িত না হলে আবারও ফ্যাসিবাদে উত্থান ঘটবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই ৫ দফা জামায়াতে ইসলামী সহ সকল ইসলামী দল ও দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী অন্যান্য রাজনৈতিক দল একমত হয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে ৫ দফা বাস্তবায়নের।
তিনি বলেন, কিন্তু সরকার যদি এই ৫ দফা উপেক্ষা করে নির্বাচনের আয়োজন করে তবে বুঝে নিতে হবে সরকার একটি রাজনৈতিক দলের আনুগত্য স্বীকার করছে এবং একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ঐ দলকে ক্ষমতায় বসাতে আয়োজন করছে। জামায়াতে ইসলামী দেশপ্রেমিক শান্তিপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। সংঘাত, সংঘর্ষে জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ৫ দফা দাবি উপেক্ষার পথে হাটে তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী দুর্বার গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
আগে গণভোট পরে সংসদ নির্বাচন হতে হবে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন হওয়ার সুযোগ নেই। যারা সত্যিকার অর্থে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় না তারাই জুলাই সনদ নিয়ে তালবাহানা করছে। তারা প্রথমে স্পষ্ট বলেছেন তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিপক্ষে। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার চাপে তারা গণভোটরে পক্ষে সমর্থন দিলেও গণভোট নিয়ে দ্বিচারিতা করছে। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় তারাই গণভোট সংসদ নির্বাচনের দিন চায়। কারণ তারা তাদের সন্ত্রাসী, লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ব্যালট ছিনতাই করে গণভোটে ‘না’ প্রস্তাবে সিল মারার চক্রান্ত করছে। তারা চায় না জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক। কারণ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হলে তারা দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না। নূরুল ইসলাম বুলবুল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে নিজেরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার শামিল হবে। জনগণকে আবারো ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার দিকে ঠেলে না দিয়ে ৫ দফা দাবি মেনে নিতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা জেলা আমীর মাওলানা দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা নায়েবে আমীর ও ঢাকা-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শাহিনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান, ইসলামি ছাত্রশিবিরের ঢাকা জেলা উত্তরের সভাপতি আবু সুফিয়ান, ইসলামি ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা জেলা নায়েবে আমীর ও ঢাকা-২০ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আব্দুর রব, ঢাকা জেলা সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসেন, ঢাকা জেলা শুরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তৌফিক হাসানসহ মহানগরী ও ঢাকা জেলা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে, প্রধান অতিথি নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।