DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজনীতি

স্থানীয় আ’লীগ নেতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সাতকানিয়ায় ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে ২ জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ডাকাত আসার গুজব ছড়িয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলী করে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাত দশটায় উপজেলার এওচিয়া

Printed Edition
SAT

এস আই বাবর, সাতকানিয়া: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ডাকাত আসার গুজব ছড়িয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলী করে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাত দশটায় উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কাঞ্চনা ইউনিয়নের নেজাম উদ্দিন (৪৪) ও আবু ছালেক (৪১)। এর মধ্যে নেজাম উদ্দিন বিগত আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামী হয়ে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে চলে গিয়েছিলেন। আর আবু ছালেক ছিলেন ২৪ এর জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুজনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই ঘটনায় গুলীতে আরো পাঁচজন আহত হয়েছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুই জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য নজরুল ইসলাম মানিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন জানান, নজরুল ইসলাম মানিক বিগত আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময়ে এলাকার নিরীহ জামায়াত কর্মীদের উপর বার বার হামলা ও শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। বিগত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মানিকও পালিয়ে যায়। তবে সম্প্রতি সে আবারো এলাকায় এসেছে এবং এলাকায় অবস্থান করছেন এমন সংবাদ পেয়ে জামায়াত কর্মীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য ছনখোলা এলাকায় যায়। এসময় নজরুল ইসলাম মানিকের লোকজন মসজিদের মাইকে ডাকাতির ঘোষণা দিয়ে এলাকার লোকজনকে উত্তেজিত করে জামায়াত কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে জামায়াত কর্মী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন পারভেজের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় গুলীতে আরো কয়েকজন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল ও কয়েকটি গুলীর খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে পিস্তলটি কে ব্যবহার করেছে সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। এদিকে মঙ্গলবার বিকালে নিহতদের লাশ নিজ নিজ গ্রামে নিয়ে আসলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাজার হাজার নারী পুরুষ তাদের লাশ এক নজর দেখতে ভিড় করেন। এসময় অনেকের চোখেই ছিল পানি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সৌদি আরব থেকে নেজাম উদ্দিন দেশে এসে কাঞ্চনার নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এবং এলাকায় সামাজিক কাজ থেকে শুরু করে বিচার শালিসেও অংশ নিতে শুরু করেন। এনিয়ে স্থানীয়ভাবেও নেজামের একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, বিদেশ থেকে ফিরে এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা নেজাম উদ্দিনকে এর আগে আরো একবার হামলা করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি রাতে একটি মাহফিল থেকে ফেরার পথে কাঞনচনা ইউনিয়নের ৮ নস্বর ওয়ার্ড ধোপাপাড়ার টেকে রাত আনুমানিক ২টার সময় নেজাম উদ্দিনকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলী ছুড়লেও ভাগ্যক্রমে গুলী নেজামের শরীরে লাগেনি। তবে তার সাথে থাকা মোহাম্মদ এরশাদ রিফাত গুলীতে গুরুতর আহত হয়ছিল। রিফাত ৭ নং ওয়ার্ডের বকশীরখীল এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।

নিহত আবু ছালেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেশ নির্যাতিত হয়েছিলেন। হয়েছিলেন বিভিন্ন মিথ্যা মামলার আসামী। গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস শুরু করেন ছালেক। ২৪ এর জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে সেখানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন আবু ছালেক। তার ফেসবুক আইডিতে জুলাই আন্দোলনে তার অংশ নেয়ার বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও ভিডিও দেখা গেছে। এদিকে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়া আবু ছালেককে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খুনীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক খাঁন তালাত মাহমুদ রাফি।