বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেবে। ফ্যাসিবাদে অনেকেই আপস করেছে, কিন্তু জামায়াত কখনও আপস করেনি এবং ভবিষ্যতেও কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা এই সভার আয়োজন করে।

তরুণদের আত্মত্যাগের কারণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে, তাই তরুণদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার কথা বলেন জামায়াতের আমীর। তিনি বলেন, এ জন্যই তরুণ ও বিপ্লবীদের টার্গেট (নিশানা) করা হচ্ছে। ‘আমরা ওই সমস্ত দুষ্কৃতকারীদের বলতে চাই এভাবে কাপুরুষোচিত হামলা করে দু’একজন মানুষকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র তোমরা করছ জাতিকে ভয় দেখানোর, তোমাদের প্রতিটি বুলেটের আঘাত এই জাতিকে নতুন করে জীবন দেবে। ইনশাআল্লাহ। অতএব সাবধান, যদি ভালো হয়ে যাও তবে ভালো, যদি ভালো না হও তাহলে এই জাতি তার প্রয়োজনীয় পাওনা সকলের কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে।

ওসমান হাদীকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, তার জীবন নিয়ে জামায়াত দারুণভাবে শঙ্কিত। তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আল্লাহ যেন তাকে আবার বিপ্লবী হিসেবে মানুষের মাঝে ফিরিয়ে দেন। ওসমান হাদীর চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানান জামায়াতের আমীর। তরুণ বিপ্লবীরা আহত হলে, মৃত্যুর দিকে চলে গেলে তারপর সরকার নড়েচড়ে বসবেÑএমনটি চান না জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যাতে এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখাতে না পারে, সে জন্য সরকারকে তার দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আজকে অনেকের পদত্যাগের ব্যাপারে দাবি উঠেছে। আমরা তাদের অনুরোধ করব, আপনারা পদত্যাগ নয় বরং দায়িত্ব পালনের যোগ্য, এটাও আপনারা প্রমাণ করুন। যদি করতে ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন, ৫ আগস্ট বারবার ফিরে আসবে। কিন্তু এটা আমাদের কামনা নয়।’

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বক্তব্যের সমালোচনা করে ব্যাখ্যা দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান বলেন, তার (ওসমান হাদী) ওপরে এই বেদনাদায়ক কাপুরুষোচিত আক্রমণের কারণে আজকে গোটা দেশবাসী যাদের মনে সামান্য মানবিক মূল্যবোধ আছে, সবাই দারুণভাবে ব্যথিত। তারা সকলে সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। এমনই প্রেক্ষাপটে আজকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি জায়গায় থেকে, বর্তমানে কার্যত বাংলাদেশ এই কয়টা দিন যাদের নিয়ন্ত্রণে চলবে, সেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান, তিনি একটি বক্তব্য রেখেছেন, যা আমি বিশ্বাস করি আমার মতো সমস্ত মানুষকে আহত করেছে।

সিইসির বক্তব্য জাতি মোটেই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি মন্তব্য করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি তাকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব, আপনার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা আপনাকে দিতে হবে। জাতির মনে যে দুঃখ সৃষ্টি করেছেন, এই দুঃখ দূর করার দায়িত্ব আপনার। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, আপনি যে সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গায় এখন দায়িত্ব পালন করছেন, এই জায়গায় দায়িত্ব পালনের জন্য আপনি উপযুক্ত ব্যক্তি। এটা আপনাকেই প্রমাণ করতে হবে। এ জন্য আমি অনুরোধ করব, দেরি না করে তিনি যেন তার বক্তব্যটি জাতির সামনে স্পষ্ট করেন। তাহলে জাতি তার ব্যাপারে যদি কোনো দুঃখ পেয়ে থাকে হয়তো দূর হবে, না হয় জাতি সিদ্ধান্ত নেবে। দুইটার যেকোনো একটা হবে।'

জামায়াত আমীর বলেন, ‘আমরা উনি এবং ওনার মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাদের সকলের কাছে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব, আপনারা কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো আচরণ এই জাতির সাথে করবেন না। সকল জায়গা থেকে আমরা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ দেখতে চাই।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের সমালোচনা করা যায়, কিন্তু খণ্ডিত বা বিভ্রান্তিকরভাবে বক্তব্য প্রচার করে আমাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানো যাবে না। ন্যায্য ও সত্য সমালোচনা আমরা গ্রহণ করব, তবে জাতির ক্ষতি হবে এমন সাংবাদিকতা করা উচিত নয়।

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম বলেন, গত ৫৪ বছরেও দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। শাসকদের কারণে জাতি বারবার বিভক্ত হয়েছে এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত ঐক্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় হাদীর ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে।

অন্য সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখনও পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি ওসমান হাদীর ওপর হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনে দলের প্রার্থী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, ফেনী-১ আসনের প্রার্থী এস এম কামাল উদ্দিন, দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মোকাররম হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী কবির আহমদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য আবদুস সবুর এবং ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন সরকার।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। সঞ্চালক ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান। এর আগে বেলা তিনটায় কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। এরপর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে মহানগর শিল্পী গোষ্ঠী।