# হাসিনার অধীনে নির্বাচন অংশ নেয়ায় ক্ষমা চাইলেন চুন্নু
সপ্তমবারের মতো ভেঙেছে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গঠিত জাতীয় পার্টি। এবার দলটির সদ্য বহিষ্কৃত নেতা আনিসুল ইসলাম ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্ব একই নামে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কমিউনিটি সেন্টারে সদ্য বহিষ্কৃত ৭ নেতাদের নেতৃত্বে নতুন জাতীয় পার্টির কাউন্সিল হয়।সেখানে আগত কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে নতুন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আর মহাসচিব হয়েছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে জাতীয় পার্টি গঠিত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম জহির নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব হিসেবে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের নাম ঘোষণা করেন। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন– মোস্তফা আল মাহমুদ ও মো. আরিফুর রহমান খান।এ ছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (রওশন এরশাদ) অংশের নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা প্রমুখ।
কাউন্সিলে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম দিদার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের দেশকে একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছিলাম। আজ সবাই সব কথা বলে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার কথা কেউ বলে না।
তিনি বলেন, এখন সরকার বলছে সংস্কার করতে হবে। সংস্কার কি আমরা করিনি। শিক্ষানীতি, ঔষধনীতি, উপজেলা পদ্ধতি– এসবই সংস্কারের অংশ ছিল। এখন সংস্কারের জন্য বিদেশ থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হয়। তারা কীভাবে সংস্কার করবে। তারা সংস্কারের প্রস্তাবনা দিতে পারে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সংসদ লাগবে। নির্বাচনে কথা উঠছে কিন্তু কীভাবে নির্বাচন হবে। আদৌ নির্বাচন হবে কি না জানি না। তাছাড়া দেশে এখন যে পরিবেশ বিজার করছে তাতে নির্বাচন কি দরকার। বড় দুই দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে নিলে নির্বাচনের খরচ বাবদ দুই হাজার কোটি টাকা বেচে যায়।
সভাপতির বক্তব্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার সংস্কার করছে কিন্তু এই সংস্কার তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সংসদ দরকার। আর সংসদের জন্য দরকার জাতীয় নির্বাচন। যদিও সরকার নির্বাচনের কথাও বলছে। কিন্তু আদৌ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য দরকার। কিন্তু সরকার তা করছে না।
বিভাজনের রাজনীতি বাদ দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, দখলবাজি চলছে। মানুষ খুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাংবাদিকরাও হত্যার শিকার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন চুন্নু : জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব মুজিবুর রহমান চুন্নু বলেছেন, আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোনো বেআইনি কাজ করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাই।শনিবার জাতীয় পার্টির ১০ম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি এসব কথা বলেন।
চুন্নু বলেন, গত প্রায় চার বছর আমি জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে ছিলাম। ভুলভ্রান্তি আমার থাকতে পারে। যে সমস্ত ভুল ভ্রান্তি ছিল, সেগুলো আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে আমি দেশবাসীর কাছে একটি কথাই বলব, আমরা রাজনীতি করতে গিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে সব সময় হয়তো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা বিগত অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। অনেক সময় অনেকে আমাদের বিভিন্নভাবে কটূক্তি করেন, বিভিন্ন দলের সহযোগী বা স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে আমাদের আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোনো বেআইনি কাজ করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকে, যদি নৈতিকভাবে কোনো ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে এই কাউন্সিলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।