জুবায়ের হোসেন, নাটোর : নাটোর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে জেলা শহর, সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-২ আসন। এখানে জামায়াতের একক প্রার্থী, বিএনপিতে দুলু ও কাসেম। তিন লাখ ৮৪ হাজার ২৯ জন ভোটার এ আসনে দুটি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে এই আসন গঠিত। দেখা যায় প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়মিত জনসমাবেশ ছাড়াও নানা ভাবে নির্বাচনী তৎপরতা অব্যহত রেখেছেন প্রার্থীরা। দলের নেতাকর্মীরা তাদের দল ও প্রার্থীর জন্য মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নাটোর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির’, বাগতিপাড়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুস আলীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগ, পথসভা, সমাবেশ করে প্রচার চালাচ্ছেন। চলতি বছরের শুরুতেই নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে নিয়ে বিশাল জনসমাবেশ করে নিজের দলের অবস্থানের জানান দেন তিনি। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর কাছে খুব সামান্য ভোটে পরাজিত হয়ে নাটোরে সাড়া ফেলেছিলেন জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক ইউনুস আলী। তিনি ৩২৫৯০ ভোট পেয়েছিলেন এবং শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ৩৪৮৮২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।”
“নাটোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ড. মীর মোঃ নূরুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে অনেক আগেই অধ্যাপক ইউনুস আলীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় জামায়াত। দীর্ঘদিন এই আসনে জোটবদ্ধ নির্বাচন হওয়ার কারণে আমরা প্রার্থী দিতে পারি নাই। আমরা আশা করি অধ্যাপক ইউনুস বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন ইনশাল্লাহ। আমাদের প্রার্থীসহ সকল নেতাকর্মীরা মাঠে ময়দানে সক্রিয় রয়েছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জামায়াত সবচেয়ে নির্যাতিত হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসি দিয়ে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছে তাই সাধারণ ভোটাররা এবার জামায়াতের প্রার্থীকে মূল্যায়ন করবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন এবারও ভোটের মাঠে অধ্যাপক ইউনুস আলী ভালো কিছু করবেন।” “বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নলডাঙ্গা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাওলানা জিয়াউল হক বলেন, তিনি একজন সাদা মনের মানুষ সর্বস্তরের মানুষ তার কাছে যেতে পারেন মন খুলে কথা বলতে পারেন। যার কারণে আমরা এবার নাটোর-২ আসনে তার বিকল্প অন্য কাউকে দেখছি না। জনগণ এবার জামায়াতের দিকে ঝুঁকছেন ইনশাল্লাহ ইউনুস আলীর বিজয় সুনিশ্চিত।” “জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আতিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, তিনি ক্লিন ইমেজের একজন রাজনীতিবিদ তাই সাধারণ মানুষের ভিতরে একটি গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে । দীর্ঘদিনের কারা নির্যাতিত নেতা, দুর্নীতি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে যার কন্ঠ ছিল সোচ্চার সেই কারনেই তিনি আগামী নির্বাচনে তিনিই বিজয়ী হবেন।”
“অধ্যাপক ইউনুস আলী সংগ্রামকে বলেন, নাটোর একটি ঐতিহ্যবাহী শহর নবাবের আমলেও দুর্দান্ত প্রতাপ এই নাটোরের ছিল। কিন্তু নাটোর বাসির দুর্ভাগ্য সঠিক নেতৃত্ব না আসার কারণে দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে নাটোরের মানুষকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ,ও মাদক মুক্ত সমাজ উপহার দিব। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার তার সন্তান হত্যার ন্যায্য বিচার পাবে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা,রাস্তা-ঘাট,ব্রিজ-কালভাট নির্মন করবো। বেকার শিক্ষিত যুব সমাজের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করব। উচ্চ শিক্ষার জন্য নাটোরে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি ইউনিভার্সিটি করা হবে ইনশাল্লাহ। আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাসন ছাড়া দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ,ও মাদক দূর হবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে নাটোরের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনব এবং নাটোরবাসীকে একটি নান্দনিক নাটোর উপহার দিব ইনশাআল্লাহ।”
এ দিকে জামায়াত নীরবে মাঠ গোছালেও মেরুকরনের রাজনীতিতে বিএনপি। বিএনপিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক উপমন্ত্রী এই আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজিপুরে ১৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট মামলায় সাত বছরের দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি গত দুটি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। সেই দুটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন তার সহধর্মীনি তৎকালীন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছাবিনা ইয়াসমিন ছবি। চলতি বছরের শুরুতে আদালতে আপীলের রায়ে দুলুসহ ৬৮জন দন্ডপ্রাপ্তকে খালাস প্রদান করায় এখন আর তার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোন বাঁধা নেই। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমেটির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ সংগ্রামকে বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ লুটপাট ছাড়া নাটোরের কোন উন্নয়ন করেনি। নাটোরের যত উন্নয়ন, স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট সব করেছেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি মন্ত্রী থাকার সময় দল মতের উর্দ্ধে উঠে জেলার উন্নয়ন করেছেন। তিনি বলেন, দুলু নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার সকল অঞ্চলে নিয়মিত সভা সমাবেশ করছেন। এসব সভা সমাবেশে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
“অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সংগ্রামকে বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে বিগত দিনে নাটোর বাসির জন্য কি করেছি তা তারা জানেন, নাটোর কে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন মন্ত্রী হিসেবে যে উন্নয়ন করেছিলাম গত ২০ বছরে তার কিছুই হয়নি। এমন কোন গ্রাম নেই যে গ্রামের রাস্তা আমি পাকা করেদেইনি। আগামীতে নাটোরের মানুষে জীবন মানের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে নাটোরে বড় বড় শিল্প কারখানা স্থাপন করব যাতে বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। নাটোর শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে এবং মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে আরও দুটি বাইপাস করা হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যলয় করে দিব।নাটোরকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি মুক্ত করবো।”
জেলা বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেম। তিনি সরাসরি মাঠে না থাকলেও দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন এমন সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে।
“এই বিষয়ে আবুল কাশেমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি মুঠোফোনে সংগ্রামকে বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী নয় দলীয় মনোনয়নেই প্রার্থী হব। আমাকে বলা হয় অতিথি পাখি। অতিথি পাখিকে তা জনগণ জানেন। আমি নাটোরে উড়ে আসি নাই আমি দলের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করি না। এট কে করেন নাটোরের মানুষ তা ভালোকরেই জানেন। জার্সি বদলের রাজনীতি এখন আর চলবে না। আমি দলের জন্য কি করেছি আমার কি অবদান তা তারেক রহমান এবং দলের মহাসচিব জানেন। কে বাংলা ভাই সর্বহারার মতো জঙ্গী সংগঠন করেছিল তাও এদেশের জনগণ জানেন। কার জন্য পরবর্তীতে দল আর ক্ষমতায় যেতে পারে নি এটা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন। আসনে এবি পার্টির এমপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা মনে করেন, মো. মোকছেদুল মোমিন একজন শিক্ষিত, সৎ, পরিশ্রমী এবং জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ। মানুষ তাঁর দীর্ঘদিনের সামাজিক, জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান এলাকার জনগণকে আস্থাশীল করেছে। এবি পার্টির নাটোর জেলা যুগ্ম আহবায়ক হাকীম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এবারের নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী জনসেবার মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকবেন।মো. মোকছেদুল মোমিনের মতো প্রার্থী নাটোর-২ আসনের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অঙ্গীকার করবেন। তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাই জনগণ তাঁকে ভালোবাসে। আমরা অশা করি আগামীতে নাটোরের সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হবেন।