বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। গতকাল রোববার গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কোন একটি রাজনৈতিক দল নয়, সকল রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে, তাদের সকলের অবদানের প্রেক্ষিতেই সংগঠিত হয়েছে ছাত্র-গণঅভ্যত্থান-২০২৪। মাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে যদি আমরা মনে করি যে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার বা ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে সেটা সঠিক নয়। এটা হচ্ছে ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।

সালাহ উদ্দিন বলেন, জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে এই পর্যন্ত আমাদের যে পরিসংখ্যান বেরিয়েছে ৪২২ জন আমরা ছবি সহকারে আমাদের নেতা-কর্মীদের তালিকা প্রকাশ করেছি। এ সংখ্যা আরো বেশি হবে যারা জুলাই ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন করেছেন, শহীদ হয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি যে ভূমিকা, যে সংগ্রাম, যে ত্যাগ করেছে সেই রক্তের সিড়ি বয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এখানে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরাম সংগ্রাম ত্যাগ রক্তদানের মধ্য দিয়েই ধারাবাহিকভাবে সেই রক্তের সোপানগুলো তৈরি হয়েছে।শাপলা চত্তরের যে নৃশংস হত্যাকা- সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি(এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বক্তব্যে রাখার জন্য সালাহ উদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সালাহ উদ্দিন।তিনি বলেন, শনিবার একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় আমার একটা বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন, আমি এটাকে স্বাগত জানাই। এভাবেই রাজনৈতিক চর্চা হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক চর্চা হওয়া উচিত, যথেষ্ট সম্মানের সাথেই তারা কথাগুলো বলেছেন। আসলে বয়সের কারণে অনেকেই আবেগে হয়তো অনেক কথা বলেছেন। আমি সেটা নিয়ে ক্রিটিসাইজ করতে চাই না। আমি শুধু আহ্বান জানাবো যে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা জুলাই গণঅভ্যত্থানের সাথে জড়িত, যারা জীবন দিয়েছে, গুলীর মুখে দাঁড়িয়েছে, তাদের সামান্য কিছু ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে সেটা আমরা রাজনীতিতে যেহেতু অনেকদিনের আমাদের অভিজ্ঞতা আমরা সেই দৃষ্টিকোন থেকে দেখি এবং আশা করি তারা এ সমস্ত ভুলভ্রান্তি থেকে মুক্ত হবে ভবিষ্যতে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে যাতে আমরা কলঙ্ক মুক্ত রাখতে পারি সেভাবে তারা ভূমিকা রাখবেন। তারা আমাদের সন্তানের মতো, তারা কিছু কিছু ভুলভ্রান্তি করতেই পারে। সেটাকে আমরা এত সিরিয়াসলি নেই না। তাদেরকে সংশোধন হওয়া এবং তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করার এখনই সময়।

সালাহ উদ্দিন বলেন, আমার বক্তব্য হলো জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ২৪ এর ভূমিকা আমাদের জাতীয় জীবনে একটি লিডিং ফোর্স, ড্রাইভিং ফোর্স আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি শক্তি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য। এর মধ্যে কোন রকমের কোন কলঙ্ক, দাগ স্থাপন হোক সেটা আমরা কখনোই চাইতে পারি না। যে কোন বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় আমরা যেন এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করি, আমরা নিজেরা এবং সবাইকে সে আহ্বান জানাবো। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামের সম্মানিত আমির একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন- আমি দেখলাম তাতেও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যে, জুলাই যোদ্ধাদের ফ্যাসিবাদের দোসর নামে অভিহিত করে বক্তব্য দেয়া উচিত নয়। সে বক্তব্যের সাথে আমি একমত এবং সেই বক্তব্যকে ধারণ করা আমাদের সকলের উচিত, তাদেরও উচিত। কিন্তু আমাদের বক্তব্য নিয়ে কাটিং করে বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা দেয়া থেকে সর্বমহলকে বিরত থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাবো।

তিনি বলেন, যারা এই প্রেস ব্রিফিং এ কথাগুলো বলেছেন, তাদেরকে আমি সম্মান করি। যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে ধারণ করে নতুন রাজনৈতিক দল সৃজন করেছেন তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। কারণ জাতীয় জীবনে আমরা মনে করি এই নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে আমাদেরকে এগিয়ে দিতে হবে এই জাতির প্রয়োজনে। তারাই ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক, তারাই ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের অবদান অপরিসীম এবং ভবিষ্যতেও তারা সেই গণতান্ত্রিক চর্চাকে অব্যাহত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এটাই ছিল আমার বক্তব্য।

আপনার বক্তব্য কি বিকৃত করা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি মনে করি না, বিকৃত করা হয়েছে। তবে আংশিক বক্তব্যটা কাট করে তারা কথা বলেছে বলে আমার মনে হয়। কারণ আমি আমার বক্তব্যের শেষ লাইনে বলেছি যে ওখানে কোন জুলাই যুদ্ধা সঠিক কোন জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত কোন সংগঠন অথবা ব্যক্তি ওই বিশৃঙ্খল ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না, জড়িত থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কয়েকটা ভিডিওতে আমি দেখেছি, একটা ছেলে জুলাই নামে একটা গেঞ্জি গায়ে দেয়া ছিল। একটা পুলিশের ব্যারিকেড নিজে নিজেই সরাচ্ছে এবং ধপাস করে পড়ে যাচ্ছে একটা ইটের উপরে নিজে নিজেই, কয়েকজন ধরে বলল যে এই হয়েছে সেই হয়েছে। আরেকজন ছেলে দেখলাম যে নিজে নিজেই পড়ে গিয়ে বলছে, যে আহত হয়েছে এবং তার পায়ে সিটি স্ক্যান লাগবে এবং বলছে যে সে এসএসসি পাস করছে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, এই বিষয়গুলো তদন্তনাধীন আছে। সরকারও সম্ভবত একটা তদন্ত টিম গঠন করেছে, তাদের ফাইন্ডিংস কি আসে দেখা যাক? তবে আমার মনে হয়, কিছু কিছু ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা যে দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য হয়তবা এগুলো করে থাকতে পারে কোন কোন গোষ্ঠী... তার সাথে হয়ত পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা এবং পতিত ফ্যাসিবাদ জড়িত থাকতে পারে। তবে সেটা তদন্ত করার আগে বলা যাবে না।