সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সকল রাজনৈতিক দলের সাথে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করেছে, যা ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ তৈরির প্রাথমিক অগ্রযাত্রা। এটি শুধু রাজনৈতিক দলসমূহের মতামতের সমষ্টি নয়, একটি জাতির ন্যূনতম ঐক্যমতের দলিলও বটে। তাই সনদটির আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে সংস্কারবিরোধী মনোভাব পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম গত শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার সূচনা ঘটে, যা ক্রমেই ফ্যাসিবাদী রূপ ধারণ করে। ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সুবিধা অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার, রাষ্ট্রের সকল কাঠামোয় দলীয়করণ এবং চরম দমন-পীড়নের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পায়। এই ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধেই বাংলাদেশের ছাত্রজনতা রক্তক্ষয়ী জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ এনে দেয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সূচিত হবে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল জুলাই গণহত্যার বিচার, জুলাই শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা, বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও ব্যবস্থাগুলোর মৌলিক সংস্কার এবং এর ওপর ভিত্তি করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছিÑ একদিকে সরকার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি, অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই সংস্কার প্রক্রিয়ার মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়ে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিশেষত, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে উচ্চকক্ষে ‘প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর)’ ভিত্তিক আসনবণ্টনের প্রস্তাবে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। পিএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক ও দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার প্রস্তাবেও তারা আপত্তি জানিয়েছে। একইভাবে বিচারপতি নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও অডিটর জেনারেল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার প্রস্তাবসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতীতে দুর্নীতি, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল, সেসব সংস্কারের বিরুদ্ধেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে তারা মূলত সংস্কারবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। আমরা মনে করি, সংস্কারের অংশীদার কেবল রাজনৈতিক দল নয়Ñ দেশের প্রতিটি মানুষ। তাই গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত যাচাই করে প্রকৃত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করাই সরকারের দায়িত্ব।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কোনো দলীয় অবস্থানকে অগ্রাধিকার না দিয়ে সরকারের দায়িত্ব গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করা। তাই অতিসত্বর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আদেশ জারি করে দ্রুত গণভোটের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণের জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নতুন বাংলাদেশ গঠনে জুলাই সনদও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একটি অবাস্তব চিন্তা। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে আমরা সকল পক্ষকে সংস্কারপরিপন্থী মনোভাব পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।