বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করা কয়েকটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মিরপুরের পল্লবী থেকে মৌন মিছিলপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, যে দলটি এক সময়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময় জনগণের বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময়ে মানুষের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গেছে তারা সবসময় বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করে। এবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। আমি নাম নেবো না, আপনারা বুঝে নেন। বাংলাদেশের মানুষ সবই বুঝে। আরেকটি দলের কথা উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, যারা নাকি হাতপাখা দিয়ে ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে বাতাস করেছে তারা নাকি কোথাও পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন চায় না। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি দল যে সবসময় বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করেছে।

মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সারাদেশে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিরপুরের পল্লবীর বিআরটিসির বাস ডিপোর সামনে থেকে মৌন মিছিলের কর্মসূচি করে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ঠাঁই নেই। আর কোনো শকুনি কখনই থাবা দিতে পারবে না বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্রের ওপরে। আজকে যারা নতুন নতুন বাক্য বিশারদ হয়েছেন রাজনীতিতে তাদের উদ্দেশ্যে নসিহত করছি, যারা নতুন করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখছেন, এই স্বপ্ন দেখা ভালো। কিন্তু মনে রাখতে হবে কেউ যদি দেশে নির্বাচনকে পিছিয়ে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে এবং নির্বাচন না করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে চায় অথবা বিভিন্ন রকমের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্র করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসরা যেন আবার পুনর্বাসিত হয়।

গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে আজকের এই বাংলাদেশে আমাদের গতিপথ নির্ধারিত হবে জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিস্টদের রাজনীতি হয়েছে বাংলাদেশে ঢাকায় এই মিরপুরে, গুলিস্থানে, পল্টনে কিন্তু দাফন হয়েছে দিল্লীতে। সুতরাং যারা শেখ হাসিনাকে এই ফ্যাসিস্টকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র এবং প্লট সৃষ্টি করছে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করব।

যারা পিআর পদ্ধতির নামে বাংলাদেশে নির্বাচনের দাবি তুলছে, যারা বলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই, তাদের একটা অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তারা জানে, কেয়ারটেকার সরকার তিন মাসের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়, কেয়ারটেকার সরকার তিন মাসের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিকভাবে ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়, এখন সেই কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে আমরা নিরপেক্ষ এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কেয়ার টেকার সরকার হিসেবেই মনে করি।

সালাহ উদ্দিন বলেন, যারা আজকে সংস্কার কমিশনে গিয়ে আলোচনা করছে খানা-পিনা খাচ্ছে সন্ধ্যা বেলায় চলে যাচ্ছে এবং কোন সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না তারা কারা? তারা কেউ ১৩ দল, কেউ ১৪ দল, কেউ বিভিন্ন রকমের দল, যারা আওয়ামী লীগের সাথেও বিভিন্ন সময় সংযোগে ছিল। তাদের বক্তব্য শুনে যদি সংস্কার কমিশনে সিদ্ধান্ত নিতে হয় জাতির জন্য দুর্ভাগ্য হবে। আমি বলছি না যে, ওখানে সবাই আওয়ামী লীগের সাথে ছিল কিন্তু কিছু কিছু দল ছিল যাদেরকে ওখানে আহ্বান করা হয়েছে আমরা মানা করেছিলাম তাদের সাথে বসে কিভাবে সংস্কারের আলোচনা করব কিন্তু সংখ্যায় অনেক তাদেরকে নিয়ে তারা লাভ করছে খানা-পিনা খাচ্ছে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া বেরিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আজকে জুলাই মাসের ১৮ তারিখ যদি জুলাইয়ের ভেতরে জুলাই সনদ অর্থাৎ জাতীয় সনদ প্রণীত না হয় সেজন্য দায়ী থাকবে এই সংস্কার কমিশন, ঐক্য কমিশন এবং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তিনি বলেন, সেজন্য আমাদের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে অবিরাম। বিএনপির কারণে নাকি সংস্কার হচ্ছে না। এক এক করে প্রতিদিন সাংবাদিক বন্ধুদের বলছি প্রত্যেকটা ঐকমত্যে আসার পিছনে বিএনপির পরামর্শই নিতে হচ্ছে। বিএনপি প্রত্যেকটা ঐকমত্য পোষণের জন্য এগিয়ে আসছে। যেহেতু আমাদের এই প্রস্তাব হচ্ছে ৩১ দফা প্রস্তাব জাতির জন্য সংস্কারের।

তিনি বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনের সাথে বসছি আলাপ করছি সমাধানে যাচ্ছি ঐকমত্যে পৌঁছাচ্ছি এইভাবে আমরা একদিন এই সনদ তৈরি করতে পারব। তবে এই কথা সত্য শতভাগ প্রস্তাবে হয়তো গণতন্ত্রের মধ্যে সবাই একমত হতে নাও পারে। সেইটাই আমাদের জন্য গণতন্ত্রের বিউটি। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো আমরা সর্ববিষয়ে হয়তো একমত হবো না। কিন্তু আমরা জাতি, জনগণ, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাই একই রাস্তায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব।

পরে বিএনপির এই নেতা ‘এদেশ আমার মুক্ত, আর দেবো না রক্ত’ , ‘ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই, বাংলায় বাংলায়’, ‘রক্তঝরা বাংলায় ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই’ শ্লোগান ধরেন।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব মোস্তফা জামানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।