বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, অতীতে যারা সরকারে ছিল তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কারণে স্বাস্থ্যখাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে হেলথ কমপ্লেক্স চালু করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানো হবে।

গতকাল শুক্রবার জামায়াতে ইসলামী মতিঝিল পূর্ব থানার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব কেবল ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করা নয়। বরং রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের প্রয়োজনে সার্বিক কাজ করা। যেমনটি করছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামী কখনো ক্ষমতায় না বসেও জনগণের যেকোন দুর্ভোগ, দুর্দিনে সবার আগে সবখানে ছুঁটে যায়। জামায়াতে ইসলামী ৪ দফার ভিত্তিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারমধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা। জামায়াতে ইসলামী দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমাজ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কারণ ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে সমাজের প্রতিটি মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষ হিসেবে প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ও স্বাধীনতা লাভ করবে।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস চিরতরে বন্ধ করা হবে। জামায়াতে ইসলামীতে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক সেক্রেটারি শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের দায়িত্ব পালনকালে ঐ তিন মন্ত্রণালয়ে কোনো দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতি হয়নি। আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কেউ ১ পয়সার দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শিল্প মন্ত্রী হওয়ার পর বন্ধ থাকা সব চিনিকল পুনরায় চালু করেছেন এবং চিনিকল গুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি লুটপাটের কারণে চিনিকল গুলো লোকসানের মুখে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। আগামীতে জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে বন্ধ সকল কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা হবে। নতুন বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে দাঁড় করানো হবে।

রাজধানীর কমলাপুর শেরে বাংলা রেলওয়ে স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. জসিমুল হক পাটোয়ারী, মতিঝিল পূর্ব থানা আমীর নুর উদ্দিনসহ স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।

এর আগে ড. হেলাল উদ্দিন কমলাপুর শেরে বাংলা রেলওয়ে স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে মতিঝিল যুব উন্নয়ন সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত জুলাই জাগরণ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি যুব সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে যুব সমাজকে ব্যবহার করে যুব সমাজের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়েছে তাদের বয়কট করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী যুব সমাজকে নৈতিক ও আদর্শিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে। তাই তিনি যুব সমাজকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।

ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের কাছে কেউ সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগরিষ্ট হতে পারে না। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক হিসেবে সকলেই সমান। বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে মানুষের তৈরি আইনে। মানুষের তৈরি আইনে বৈষম্য সৃষ্টি করে। যার ফলে সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে মানুষ বৈষম্যের শিকার। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে আল্লাহ আইন কায়েম হবে। আল্লাহর আইন সকল মানুষের জন্য সমান। মানুষের তৈরি আইনের পরিবর্তে আল্লাহর বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিটি মানুষ তার ধর্মীয় ও মৌলিক স্বাধীনতা লাভ করবে। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানুষের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা হবে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-৮ আসন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রমনা, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহাপুর থানার মন্দির ও পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও জামায়াতে ইসলামীর কোন স্তরের নেতাকর্মী কিংবা এদেশের আলেম-ওলামা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সম্পদ লুট করেছে এমন কোনো অভিযোগ কেউ করতে পারেনি। বরং যারা নিজেদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষের লোক দাবি করেছে তারাই হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ লুটে করেছে, দখল দিয়েছে, মন্দির ভেঙেছে। অতীতে তারা হিন্দুদের সম্পদ লুটে করে, দখল দিয়ে, মন্দির ভেঙে আলেম-ওলামাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য রাজনীতি করেছে। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী যখন জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের আলেম সমাজ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তখন ভিন্নধর্মাবলম্বীরা বলতে শুরু করছে, জামায়াতে ইসলামী নয় বরং ক্ষমতাসীনরাই তাদের ওপর জুলুম করেছে এবং তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আওয়ামী লীগ হিন্দুদের ব্ল্যাকমেইল করে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তীতে দেশের সকল ধর্মবর্ণ-জাতিগোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে সঠিক ধারনা পেয়েছে। এজন্য দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষ জামায়াতে ইসলমীর প্রতি আস্থা ও সমর্থন বাড়াতে শুরু করেছে।

ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই উল্লেখ করে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাস বরাবরই সন্ত্রাস। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সম্প্রীতির বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সংখ্যালঘু সংখ্যাগরিষ্ট তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে প্রতিটি মানুষ নাগরিক হিসেবে সমান। সম্প্রীতির নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর, ঢাকা-৮ সংসদীয় আসন কমিটির সদস্য সচিব শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে মহানগরীর হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি, পল্টন থানা সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম, পল্টন থানা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা সুশীল কুমার পাল, প্রদীপ কর্মকার, অঞ্জন নন্দী, উত্তম শীল, প্রদীপ বষার, পারদ, গংঙ্গা, অশোক কুমার মন্ডল, শ্রী বিমল বনিক, কৃশ্মপ্রত কুমার দাস, শিমুল ভৌমিকসহ ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন মন্দির কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারীসহ ভিন্নধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।