বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা আগামী নবেম্বরে গণভোট চাই। এ ছাড়া পিআর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্যও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রস্তুতি রাখতে বলেছি।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের প্রতিনিধি দলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্যরা হলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ ও এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। আর ইসির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও পদ্ধতি, গণভোট, নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং পিআর পদ্ধতিসহ ইলেকশন সম্পর্কিত নানা বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইলেকশন কমিশনের খোলামেলা আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এসে জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবশ্যই গণভোট (সংসদ নির্বাচনের) আগে চাচ্ছি। আমরা নবেম্বরে গণভোট করার জন্য বলে আসছি। আমাদের অতীতে অনেক গণভোট হয়েছে এবং সেখানে দেখা গেছে যে, ২১ দিনের ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে, ১০ দিনেও হয়েছে, ১৭ দিনেও হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচন করতে গিয়ে যদি ঝামেলা হয়ে যায়, তাহলে গণভোট আবার অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তো এই নির্বাচনে যদি ঝামেলা হয়, তাহলে আম ছালা দুটোই যাবে। এজন্য আমরা মনে করি, একটা সহজতর নির্বাচন (গণভোট), যাতে আমরা এখানে অভিজ্ঞতা নিতে পারি। এক্সপেরিমেন্ট নিতে পারে যে, কীভাবে পুলিশ সহযোগিতা করে।’
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রবাসী ভোটারদের নিয়ে কথা হয়েছে। এনআইডির পাশাপাশি জন্মসনদ দিয়েও ভোট দিতে পারবেন প্রবাসী ইসি এমন কথা জানিয়েছে। আমরা সব মিলিয়ে সেটিসফাই। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও জালভোটে রোধে এনআইডির ভিত্তিতে ভোট নেওয়ার কথা বলেছি। তারা ছবিসহ ভোটার তালিকার কথা বলেছেন। কর্মকর্তা নিয়োগে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে পিআর (সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন) নিয়ে কথা বলেছি। বর্তমান পদ্ধতিতে ৫৪ বছরে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করেনি। এতে দিনের ভোট রাতে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুটি পদ্ধতির প্রস্তুতির কথা বলেছি।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, গণভোট নিয়ে দুটি আলোচনা আছে। সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একসঙ্গে হওয়ার ব্যাপারে কোনো কোনো দলের মত আছে। আমরা বলেছি আলাদা করার জন্য যেহেতু আলাদা বিষয়। যদি আলাদাভাবে হয় এটার জন্য প্রস্তুতি যেন রাখে।
তিনি আরও বলেন, সমস্যা যেটা হবে প্রত্যেকে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়েই মনোযোগ দেবে। কাজেই ওটা প্রাধান্য পাবে না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে কোথাও ভোট দখল হলে ওটাও দখল হবে। আমরা আলাদাভাবে করার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছি। একসঙ্গে হলে সময়ের বিষয়ও আছে। উনারা বলেছেন সরকার যেটা সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।
আলাদা হলে খরচের একটা বিষয় আছে, এ বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তাহের বলেন, এটা তো খুব সিম্পল। কাজেই বড় ধরনের ব্যয় হবে না। ব্যালট বাক্স তো ওটাই থাকবে। শুধু ব্যালট, খাওয়া-দাওয়া এসবের ব্যয় হবে।
আলাদা হলে তো ভোট কম পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং যে সময় আছে এতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি একই দিন গণভোট হলে রিফর্মসের ইস্যু মাইনর হয়ে যাবে। কারণ সবাই নিজের দলের প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আরেকটা ভোটের জন্য তাকে ভোটারকে কে চাপাচাপি করবে। বরং আলাদা হলে মানুষ ভোট দেবে। আবার ঝামেলা হলে আমরা তো জেনে যাবো। আর একসঙ্গে দুটি ভোট হলে এবং ঝামেলা হলে আম ছালা দুটিই যাবে। আমরা নবেম্বরে গণভোট করার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আমাদের অতীতে অনেকগুলো গণভোট হয়েছে। ২১ দিন, ১৭ দিনের তফাতেও গণভোট হয়েছে। এখানে মার্কা নেই, মিছিল-মিটিংয়ের কিছু নেই। তাই সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হলে কোনো সমস্যা হবে না।
গণভোট নিয়ে কমিশন বলেছে অফিসিয়ালি কোনো আলোচনা করেনি। সিদ্ধান্ত নেয়নি। একজন কমিশনার বলেছেন, আমি কমিশনার হিসেবে ওই মন্তব্য (একসঙ্গে দুই নির্বাচন) করিনি। ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছি। তার এই বক্তব্য আমরা বিশ্বাস করেছি।
পিআর বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে এক্সিকিউশন হচ্ছে এমন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সিদ্ধান্তের বিষয়। ইসি বলছে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে যা যা করা প্রয়োজন আমরা সক্ষম আছি। তারা সে হিসেবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা বলেছি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ যেন লটারির মাধ্যমে হয়।
গণভোটের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়ন করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করেছে জানিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, ‘ইসি আমাদের জানিয়েছে, সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এটা বাস্তবায়ন করবেন। সেখানে ইসির কোনো সমস্যা হবে না।’