ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া (১৭) শনিবার রাতে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাত ৯টায় শেখেরটেক ৬ নাম্বার রোডের বি/৭০ নাম্বার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ওই বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন শহিদ জসিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মো. কালাম হাওলাদার।

তার এ মৃত্যু নিয়ে রোববার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

তিনি লিখেছেন- শহিদ জসিম ভাইয়ের কন্যা ধর্ষণের শিকার হলেন, আত্মহত্যাও করলেন। ধর্ষকের বিচার ও শহিদ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইন্টেরিমের দায়িত্ব। আর যদি এর জন্য আন্দোলন করা লাগে, তাহলে ইন্টেরিমকে বলব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে নেমে আসুন।

জুনায়েদ আরও লিখেছেন- একটা কথা খুব স্পষ্ট বলতে চাই, বিচার না কইরা এ দেশে কোনো রাজনৈতিক মীমাংসার সুযোগ নাই। পিলখানা, শাপলা, জুলাই শহিদদের খুনের বদলায় আইনি ফায়সালা চাই, চাই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের সমস্ত দুর্বৃত্তায়নের যথাযথ বিচার।

আলী আহসান জুনায়েদের পোস্টের নিচে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। আশরাফ হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, আসিফ নজরুলকে বসানো হলো ছাত্রদের ভরসা হিসেবে। তার থাকা অবস্থায় আসামিরা এত অল্প সময়ে জামিন কেন পেল, আর পাচ্ছেও। ইন্টেরিমকে ব্যর্থ করার পেছনে বিচার বিভাগকে ব্যর্থ করার পেছনে এই আসিফ নজরুলদের যে সহযোগিতা- এর ফলাফল এই ছাত্র-জনতা ভুগবে একদিন। এ ব্যর্থতা ইন্টেরিমের নয়, এ ব্যর্থতা আমাদের। আমরা সঠিক ব্যক্তিদের সঠিক অবস্থানে বসাতে পারি নাই।

মুহাম্মদ আসাদুর রহমান লিখেছেন, আসিফ নজরুল বলছেন- বিচার শুরু হতে জুন লেগে যাবে, কেন এত দীর্ঘসূত্রিতা? এমডি আতাউল গনি আরিফ লিখেছেন, আসিফ নজরুলকে না সরালে বাংলাদেশে কোনো বিচার হবে না।

লামিয়ার আত্মহত্যার পর এলাকাবাসী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রোববার বিকালে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার দোকান থেকে কেনাকাটাও করেন। রাত ৮টায় তার মা রুমা বেগম ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদ্রাসায় দিতে যান। সেই সুযোগে রাত ৯টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

লামিয়ার মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির লাশ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। আমার ভাগনির ধর্ষকরা জামিন পেয়ে গেছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

এর আগে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানারবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা।