বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচিত হলে তাঁর দল সকলকে সাথে নিয়েই দেশ গড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিকে বিভক্ত করতে চাই না, বরং দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজসহ অপরাধমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ জনগণ উপহার দিতে পদ্ধপরিকর।''
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ভাষানটেক বিআরপি মাঠে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন আয়োজিত এক ছাত্র, যুব ও নাগরিক সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মু. জাহিদুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামান। এতে আরো বক্তব্য রাখেন শিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি রেজাউল করিম শাকিল, ঢাকা মহানগরী পশ্চিম সভাপতি হাফেজ আবু তাহের, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন পরিচালক হেদায়েত উল্লাহ প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মহল বিশেষ দেশে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণরুম সৃষ্টি করে মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন এবং দেশে অপশাসন-দুঃশাসন অব্যাহত রাখতে চায়। যারা অতীতে ক্ষমতায় ছিলেন তারাও এ অশুভ বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেননি। অথচ জামায়াত পাঁচ বছর একটি সরকারের অংশ ছিল। দু’জন মন্ত্রী তিনটি মন্ত্রণালয় সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করে পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও তাদের বিরুদ্ধে সামান্যতম অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ করা যায়নি। তাই বিরুদ্ধবাদীরা জামায়াতের অগ্রযাত্রা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে জামায়াতের ওপর ব্যাপক জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু তারা একজন সমর্থককেও তাদের কাছে মাথানত করাতে পারেনি, বরং আমরা এখন গণমানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও তারা এখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি, বরং তাদের একটি অংশ বিশেষ পালিয়ে গেছে। আরেকটি অংশ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাট, দখলবাজি ও মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যারা দেশে এসব অপকর্ম চালু রাখতে রাখতে চায় তারাই ফ্যাসিবাদের নব্য উত্তরসূরি।’
তিনি জুলাই বিপ্লবে দেশের যুব সমাজের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবে আমাদের যুব সমাজই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে ঐক্যবদ্ধ করে গুলি ও আগুনের মুখে দাঁড়িয়ে এক ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। তাই তারা এদেশকে আর পুরনো বৃত্তে ফিরিয়ে দিতে চায় না, বরং তারা দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত নতুন বাংলাদেশ চায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই এ পরিবর্তনে খুশি হতে পারেনি। অথচ এ জন্য আমরা দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। আমাদেরকে ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মামলা, হামলা, জেল, রিমান্ডেকে বিপর্যস্ত হয়ে আমরা ঘরছাড়া হয়েছিলাম। কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাইনি।’
তিনি নেতিবাচক রাজনীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিপ্লবোত্তর জনগণ আর দেশে বস্তাপচা রাজনীতি দেখতে চায় না, বরং তারা নতুন ফর্মূলায় নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। তারা এমন সরকার দেখতে চায়, যারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন না করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘কোনো কোনো পক্ষ নির্বাচনের পর জামায়াত ছাড়া জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। আমরা বলতে চাই, জনগণের ভোটে আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।’
তিনি জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা আমাদের নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। হামলা করা হচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর। এমনকি নারীরাও তাদের প্রতিহিংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। প্রচার উপকরণ কেড়ে নেয়াসহ পোস্টার ছেড়ে হচ্ছে। কিন্তু আমরা শত বাধা-প্রতিবন্ধকতা স্বত্ত্বেও জনণের মনের পোস্টারে স্থান করে নিয়েছি। যার প্রমাণ ডাকসুসহ দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তাই আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণদের বাংলাদেশ।’
তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণ সমাজকে ময়দানে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মু. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ ও জাতি এক মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তাই এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদেরকে ময়দানে সীসাঢালা প্রাচীরের মত ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মকে পালন করতে হবে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা।’
তিনি আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমী ও ইসলামী শক্তিকে বিজয়ী করতে সকলকে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশ ও জাতি আর নতুন করে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ দেখতে চায় না। তারা মাফিতন্ত্রীদের এক্সটেনশনও কখনো মেনে নেবে না। তাই নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকাতে আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি