গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলার প্রতিবাদে শহরের রাজবাড়ি সড়কে অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা এই বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু এখনো দেখা যাচ্ছে, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গাজীপুরে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সামাজিক মাধ্যমে আমাদের যোদ্ধাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
আমরা স্পষ্ট করে বলছি—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রশাসন যদি আজ রাতের মধ্যেই হামলায় জড়িত খুনিদের গ্রেপ্তার না করে, তাহলে আমাদেরও কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা অতীতে দেখেছি, একদলকে গ্রেপ্তার করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই খুনিদের দোসর কিছু বিচারক তাদের জামিন দিয়ে দেয়। আমরা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি—হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের প্রতিটি জেলা থেকে এই বিচারকদের অপসারণ করতে হবে, যারা টাকার বিনিময়ে অপরাধীদের রক্ষা করছে।
আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি—যদি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগের কোনো ক্যাডার আমাদের ভাইদের হুমকি দেয়, তাহলে তারা চরম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকুক। আমাদের কোনো ভাইয়ের গায়ে সামান্য আঁচড় লাগলে, তার প্রতিফলন প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে পড়বে। আজ সকালে প্রশাসনের সাথে বৈঠকে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি—‘গ্রেপ্তার খেলা বন্ধ করতে হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে হবে।
আমরা চাই 'ক্লিন বাংলাদেশ অপারেশন', কোনো লোক দেখানো অভিযান না হোক, বরং সন্ত্রাসীদের চিরতরে নির্মূল করার জন্য একটি ধারাবাহিক পদক্ষেপ হোক। মাঝেমধ্যে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা এসব সন্ত্রাসীদের আমরা জেলে দেখতে চাই।
গাজীপুরের রাজপথ থেকে আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি—বাংলাদেশের কোথাও আমাদের সহযোদ্ধাদের উপর হামলা হলে, পুরো দেশ জেগে উঠবে। প্রয়োজনে আমরা গাজীপুর থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ব। আমরা দেখিয়েছি, ছাত্রজনতা সঠিক পথের জন্য দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরতে পারে। কিন্তু ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। প্রশাসন যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়, তাহলে বাংলাদেশে নতুন আরেকটি বিপ্লব শুরু হবে।
গতকালকের হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের আজকের মধ্যেই গ্রেপ্তার করতে হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ব্রিফিং প্রয়োজন। আমরা প্রতিশ্রুতিতে নয়, বাস্তব পদক্ষেপে বিশ্বাসী। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হবে, ততক্ষণ আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ (শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাড়ে ১১টা থেকে গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠে সমাবেশ চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এরআগে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে গতকাল শুক্রবার রাতেই হাসপাতালে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
গতকাল রাত তিনটার দিকে তাঁরা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ নেন।
শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এই হামলার ঘটনায় উত্তাল গাজীপুর। শনিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ছাত্ররা। কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা হামলার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ছাত্রদের ওপর এই ন্যাক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু বিচার না হলে ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।