বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো জুলাই সনদের স্বীকৃতি ও আইনগত ভিত্তি দিতে না পারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা। সরকারের এই ব্যর্থতায় জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি পুরো জাতি চরম ব্যথিত। তিনি জনগণের প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে অবিলম্বে জামায়াতের ৫ দফা দাবি পূরণ করে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের দেয়ার আহবান জানান।

বৃহস্পতিবার (০২ অক্টোবর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহজাহানপুর পূর্ব থানার রুকন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, সরকার যদি জনগণের প্রত্যাশিত ৫ দফা দাবি উপেক্ষা করে তবে জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর উত্থাপিত, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করার ৫ দফা দাবি জনগণের দাবিতে রূপ নিয়েছে। এই ৫ দফা দাবি একটি দল ব্যতীত দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলও একমত। তাহলে এই দাবি পূরণে সরকারের অনীহা কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট একক দলকে খুঁশি করতে চায় তবে সেটি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার।

তিনি বলেন, সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে পারছে না একটি রাজনৈতিক দলের চাপে। একদিকে সরকারের ভেতরে ফ্যাসিবাদের দোসররা অপরদিকে সরকারের বাহিরে একটি রাজনৈতিক দল সরকারকে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। কারণ তারা জানে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হলে এদেশে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করা যাবে না। তাই তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিতে নানান রকম ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ষড়যন্ত্রে চক্রান্তে আটকা পড়লে শুধু জুলাই চেতনা বিনষ্ট হবে না, এই সরকারেরও আইনগত ভিত্তি থাকবে না। ফলে এই সরকারের সকল কার্যক্রম এক সময় ফ্যাসিবাদ গোষ্ঠী অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করবে। এমনকি আজকে যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে রয়েছে তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করবে। তাই জাতীয় স্বার্থের পাশাপাশি সরকারের নিজের স্বার্থেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া অনিবার্য।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত রাজৈনৈতিক সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই সনদ বাস্তবায়ন করবে এটি জাতি বিশ্বাস করে না। কারণ নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দ্বারাই রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করার ফলে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যারা রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে তাদের দ্বারা কখনোই রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। অতীতের রাজনৈতিক সরকার গুলো কেউ দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে, কেউ লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে বেগম পাড়া গড়ে তুলেছে। এসব দলের দ্বারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। তবেই দেশের মানুষ একটি সুখি-সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ পাবে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পুরো জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর যেই আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত রুকন সমাবেশে থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ থানার রুকনবৃন্দ (সদস্য) উপস্থিত ছিলেন।

পরে ড. হেলাল উদ্দিন শাহজাহানপুর, আরামবাগ এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটে দোকান মালিক ও কর্মচারি, পথচারী এবং বাসা-বাড়িতে গণসংযোগ পক্ষের দাওয়াতী অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তার সঙ্গে শাহজাহানপুর, মতিঝিল থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দাওয়াতী অভিযানকালে নেতৃবৃন্দ জনসাধারণের মাঝে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াতী লিফলেট বিতরণ করেন।