দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান গতকাল শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এক মাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পরে আনন্দের বার্তা নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের দুয়ারে সমাগত। জাতি এমন এক মুহূর্তে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছে যখন দেশ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিতে পারছে। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে এবং শান্তিতে-স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি শান্তি-স্বস্তির দেশ পেয়েছে এবং কথা বলার সুযোগ পেয়েছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ও আহত হয়েছেন আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
তিনি বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তারা বিদেশে বসে এবং দেশে ঘাপটিমেরে লুকিয়ে থাকা তাদের দোসরদের দিয়ে দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেই যাচ্ছে। দেশে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হতে পারে সেজন্য নানাভাবে বিতর্ক এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং দেশবিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবিক বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মাঝে আল্লাহর ভয় তথা তাক্বওয়ার গুণাবলি সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আল্লাহর বিধান মেনে চলার দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের মাঝে আগমন করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জীবনে শান্তি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। পবিত্র ঈদুল ফিতর ধনী-গরীব সব শ্রেণির মুসলমানদের মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে।
তিনি বলেন, পবিত্র ঈদের এই দিনে আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানুষে মানুষে দয়া, সৌভ্রাতৃত্ব, সাম্য, ঐক্য ও ভালোবাসার এক মহা সেতুবন্ধন তৈরি করি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠনে তৎপর হই এবং সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসি ও একে অপরের সুখানন্দ এবং দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিই।
প্রিয় দেশবাসীর ভালবাসায় সিক্ত সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে আমি দেশবাসীর সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ জীবন কামনা করছি। সেই সাথে আমি সবাইকে আবারো আন্তরিকভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি।
ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের শুভেচ্ছা: আগস্ট বিপ্লবের চেতনায় ন্যায়- ইনসাফ,মানবিক মূল্যবোধ ভিত্তিক শোষণ, বঞ্চনা, স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদমুক্ত কল্যাণমূখী গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে এক যৌথ শুভেচ্ছা বাণীতে তারা এসব কথা বলেন।
এক শুভেচ্ছা বাণীতে মহানগরী উত্তর নেতৃদ্বয় বলেন, রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি ও তাক্বওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। মূলত, রমযান হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও আত্মিক উন্নতি, আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম। এর মধ্যেই রয়েছে আর্ত-মানবতার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও মুক্তি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম ও কিয়াম পালনের পর আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছে পবিত্র ‘ঈদুল ফিতর’। ঈদের প্রকৃত শিক্ষাই হচ্ছে আর্ত-মানবতার কল্যাণ এবং বিপন্ন ও অভাবগ্রস্ত মানুষের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরে গণমানুষের কল্যাণ ও দারিদ্র্র্র্য বিমোচনে যাকাত ও সাদাকাতুল ফিতর যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। নেতৃদ্বয় ঈদুল ফিতরের প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে আর্ত-মানবতার কল্যাণে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
তারা বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম ও কিয়াম পালনের পর জাতি ঈদ উৎসবের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেও তারা মোটেই স্বস্তিতে নেই। স্বৈরাচারী ফ্যাসীবাদের পতন হলেও রাষ্ট্রের প্রায় সকল সেক্টরেই তাদের প্রতিভূরা এখনো সক্রিয় থেকে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে অন্য বারের তুলনায় এবার দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও নানান কারণে পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক ছিলো না। সর্বোপরি ফ্যাসীবাদের দোসররা পুরো রমযান ধরেই দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করার নানাবিধ অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্য অটুট থাকায় তারা খুব একটা সফল হতে পারেনি। এবার ফ্যাসীবাদ মুক্ত পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে চললেও ঈদে ঘরমুখী মানুষের ঈদ যাত্রাও পুরোপুরি নিরাপদ করা যায়নি। পরিবহন সঙ্কট ও বাড়তি ভাড়া সহ নানাবিধ কারণে এখন পর্যন্ত জনগণের ঈদ যাত্রা পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক হয়ে ওঠেনি। তাই ফ্যাসীবাদ মুক্ত পরিবেশে ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন ও ঈদকে আনন্দঘন করতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি জোরদাবি জানান এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সকল শ্রেণির নগরবাসীর প্রতি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।