জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “এক বছর আগে, ২০২৪ সালের এই দিনে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত—স্বাধীনতাপ্রেমী ও গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য বিজয়ের দিন। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে এই দিনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ভবিষ্যতে দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করা হবে।”
তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশক ধরে স্বৈরশাসনের শাসনযন্ত্র গুম, খুন, অপহরণ, মামলা, হামলা ও নির্যাতনকে দৈনন্দিন ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিএনপি ও অন্যান্য গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর লাখো নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলার কারণে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছিল, অনেকের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’-এর অন্ধকারে বহু মানুষ বছরের পর বছর আটক থেকেছে, অনেকেই আজও নিখোঁজ—যেমন সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলম।
তিনি অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, ব্যাংক খালি হয়ে যায়, এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হয়।
তারেক রহমান বলেন, “তবুও এই দমননীতি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ—ছাত্র-জনতা, শ্রমিক-কৃষক, নারী-শিশু, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী—সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে নামে। তখন হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করা হয়। কোলের শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-যুবক, অনেকে শহীদ হন। শুধু এই অভ্যুত্থানেই দেড় হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়, অনেকেই চিরতরে পঙ্গু বা অন্ধ হয়ে যায়।”
তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে “স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ” আখ্যা দিয়ে বলেন, “১৯৭১ সালের মতোই এই আন্দোলনও শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে শহীদদের ঋণ শোধ করার—একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে।”
তিনি উল্লেখ করেন, একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন জরুরি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে।
তারেক রহমান সাবধান করে দিয়ে বলেন, “যেমন হিটলারের নাৎসিবাদ নিয়ে কেউ গর্ব করে না, তেমনি ফ্যাসিস্ট শাসন নিয়েও গর্ব করার কিছু নেই। বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সাফাই গাওয়াও গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ৫ আগস্ট ছিল নজিরবিহীন এক ঘটনা—গণভবন, সংসদ, আদালত, এমনকি বায়তুল মোকাররম থেকেও তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী পালিয়ে যায়। তবুও তাদের মনে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই।
শেষে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হতে দেওয়া হবে না। গণতন্ত্র হত্যা বা দেশকে পরাধীন করার সুযোগ আর কাউকে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকবে, সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য; তবে সেই ভিন্নমত যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ বা চরমপন্থার উত্থানের কারণ না হয়—সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”