দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপযাপনে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচিসমূহ হচ্ছে, ৩১ আগস্ট বেলা ২টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। ১ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া এদিন সারাদেশে সকল মহানগর ও জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালী অনুষ্ঠিত হবে। ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বর্নাঢ্য র্যালী হবে নয়া পল্টনের সামনে থেকে। ৩ সেপ্টেম্বর দেশের সকল উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনা সভা ও র্যালী হবে। ৪ সেপ্টেম্বর সকল মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে হবে এবং ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি গোল টেবিল আলোচনা হবে যার ভেন্যু ও সময় পরে জানানো হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করার কথাও জানান নজরুল ইসলাম খান। আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা গ্রিনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের আগে নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে জাতীয় কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। পরে সাংবদিক সম্মলনের মাধ্যমে তা ঘোষণা করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে জাতীয় কমিটির সদস্য দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহৗদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, মাহবুবে রহমান শামীম, জিকে গউস, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, শামা ওবায়েদ, শাহিন শওকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মলনে সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা কিছু রাজনৈতিক দলের অযৌক্তিক দাবি বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পিআর পদ্ধতি দাবি করার দলগুলোর প্রতি ইংগিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, পিআর কি? ব্যাপারটা তো আাপনারা পরিস্কারই করছেন না আপনি কী ধরণের পদ্ধতি চান, যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা কি কেউ কখনো জনগণকে জিজ্ঞাসা করেছি? এই ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে যান না? সেখানে একজন লোককে বলেন যে, এতদিন আপনি যেভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে.. আমরা নতুন একটা নতুন পদ্ধতি চাচ্ছি যাতে ভোটের মূল্য থাকবে, যাতে অংশগ্রহন আনুপাতিক হারে হবে সেখানে আপনি কোনো ব্যক্তিকে না দলকে ভোট দেবেন এবং দল এমপি মনোনীত করবে। আপনার এই এলাকায় নির্দিষ্ট কোনো এমপি থাকবে না।
তিনি বলেন, আপনি কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। এই কথাগুলো কী বলছেন এলাকার মানুষজনকে বলে তাদের মতামত চাইছেন কি, তারা রাজি কী রাজি না। যখন এই নিয়ে (পিআর) ইনসিস্ট করা হয় তখন তো সন্দেহ করাই যায় আরকি। এটা একটা অযৌক্তিক চেষ্টা, যেটার অনিবার্য পরিণতি হতে পারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, যেহেতু যে বিষয়টা নিয়ে জুলুম করা হচ্ছে বা জবরদস্তি করা হচ্ছে বা চেষ্টা করা হচ্ছে, যেহেতু এটার ভিত্তিটা দূর্বল। সাধারণ মানুষ এটার মধ্যে প্রাসঙ্গিক করা হয়নি। সেহেতু এটা নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা হবে বলে আমরা মনে করি না। একটা সময় দেখা যাবে যে, এটা বন্ধ হয়ে গেছে।
একই সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যদি আপনি এটা (পিআর) রাজিও হন তাহলেও তো এই নির্বাচনে তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। কারণ সংবিধান সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তো এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারবেন না। আর সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা তো সংসদের। কাজেই করতে হলেও তো আপনার এর পরের নির্বাচনের প্রশ্ন আসবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের কোনো চিন্তা-ভাবনা থাকতে পারে, হতে পারে সেটা খুবই ভালো, হতে পারে সেটা যুগান্তকারী, কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেকেনো প্রস্তাব ভালো হোক আর মন্দ হোক, বিজ্ঞ মানুষ বলুক আর আমাদের মতো মূর্খ মানুষ বলুক, যে পর্যন্ত এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে সে পর্যন্ত সেটা জনগণের জন্য কার্যকর হতে পারে না, হওয়া উচিত না।
ইভিএমে ভোট প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দেশে শুধুমাত্র ভোটটা কিভাবে দেবেন ব্যালট পেপারে দেবেন, ব্যালট পেপারে সিল মারবেন, না মেসিনে টিপ দেবেন ইভিএম মেসিন, এ নিয়ে কত বছর ধরে আলোচনা। এখন পর্যন্ত কী তার ফয়সালা হয়েছে? আর আপনি গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা বদলিয়ে দিতে চাচ্ছেন সেভাবে সারাজীবন মানুষ ভোট নিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে আপনি সেটা পিআর এর মাধ্যমে। আপনি কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন, সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি তার প্রতিনিধি হচ্ছে কি না , সেটি যারা ভোটার তারাই নির্ধারণ করবে।