দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের প্রাথমিক সদস্যসহ সকলপদ তিনমাসের জন্য স্থগিত করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা চিঠির মাধ্যমে বিশেষ পত্রবাহকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর।

ওই পত্রে বলা হয়েছে যে, ২৬ আগস্ট কারণ দর্শানো নোটিশের যে জবাব ফজলুর রহমান দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয়। তথাপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান বিবেচনা করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন না করে দলীয় প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে আপনি (ফজলুর রহমান) টকশো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুন্ন না হয় এবং দেশের জনগোষ্ঠির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সর্বদা সর্তক থাকবেন।

এদিকে গতকাল বিকেলে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব লিখিতভাবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতরে জমা দেন বিশেষ পত্র বাহকের মাধ্যমে। ফজলুর রহমান নামে তার নিজস্ব প্যাডে চার পৃষ্ঠার এই জবাবে দলের তরফ থেকে যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন বলে জানান তার সহধর্মিনী। দলের কেন্দ্রীয় দফতর জানিয়েছে তারা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের একটি খাম পেয়েছেন।

লিখিত জবাব প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান বলেছেন, আমার দল বিএনপির ক্ষতি হয় এমন কোনো কথা বা কাজ আমি করিনি এবং করবোও না। জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে বিচার বিবেচনার প্রতি আমার সর্বোচ্চ আস্থা আছে। আমি আশা করি সুবিচার পাবো এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকব।

চিঠির জবাবের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব চিঠি দেন ফজলুর রহমানকে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অনবরত ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।বিএনপি। ফজলুর রহমানের ঢাকার ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠানো হয় বিশেষ বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এই নোটিশে বলা হয় যে, আপনি জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং আত্মদানকারী শহিদদের নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলীয় আদর্শ ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। এই গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নিয়ে আপনার বক্তব্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আপনার বক্তব্য দলের সুনাম ক্ষুন্ন করার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের প্রয়াস বলে অনেকেই মনে করে। এমনকি আপনি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত দিয়ে কথা বলছেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির সাড়ে চারশোর অধিক নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতার প্রায় দেড় হাজারের অধিক মানুষ শহিদ হয়েছেন এবং ত্রিশ হাজারেরও অধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এ ধরণের বীরোচিত ভূমিকাকে আপনি প্রতিনিয়ত অপমান ও অমর্যাদা করছেন। আপনি জুলাই আন্দোলনে থাকাদের কালোশক্তি বলে মন্তব্য করেছেন। এই ধরণের উদ্ভট ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্যের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ কারণ দেখিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।