বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে গণমুখী করতে হবে। নির্বাচন কেবল রাজনীতি নয়, এটি একটি দায়িত্ব এবং জনগণের সেবা করা এক প্রকার ইবাদত।

ঢাকা দক্ষিণ ও বরিশাল অঞ্চলের আসন প্রার্থী, আসন পরিচালক ও আসন সদস্য সচিবদের নিয়ে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী লিডারশিপ ট্রেনিং-২০২৫ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, আমাদের নানা ধরনের জুলুম-নির্যাতন, গালাগালি সহ্য করতে হবে। এতে বিরক্ত হওয়া যাবে না। ধৈর্য্যরে সাথে জনগণের কথা শুনতে হবে এবং বিপদে তাদের পাশে থাকতে হবে। দায়িত্ব পালনে কোন গাফিলতি করা যাবে না। উদারতা ও সহনশীলতার সাথে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করতে হবে। এবারের নির্বাচনে আমরা আশাবাদী, জনগণ চায় আমরা সরকার গঠন করি। ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়তে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দল রাজনীতিকে শুধু সফলতার চূড়া মনে করে এবং আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা মাঝে মাঝে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যাতে মনে হয় কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। যা দেশ ও জনগণের জন্য আশংকাজনক।

অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল। তিনি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমাদের অনেক বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে তা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা না থাকলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঘটবে : নতুন প্রজন্মকে সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিকে নৃত্য শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল রোববার এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

প্রদত্ত বিবৃতিতে তিনি ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। ফলে সমৃদ্ধ সিলেবাস থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে দেশে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হচ্ছে এবং তারা ধর্মীয় তাহযিব-তমুদ্দুন এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সৎ নাগরিক ও সৎ নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। তদুপরি ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে, যা সৎ আচরণের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা না থাকলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঘটবে এবং সৎ নাগরিক ও নেতৃত্ব তৈরি হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সঙ্গীত বা নৃত্য (গান বাজনা) শিক্ষার্থীর আবশ্যিক কোনো বিষয় হতে পারে না। বরং কোনো পরিবারের যদি একান্তই গান বা নৃত্যের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে তারা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক রেখেও বিষয়টি শেখাতে পারে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টি সব ধর্মের জন্যই অতি জরুরি বিষয়। তাই আমরা সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টাকে বলতে চাই অবিলম্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যাতে করে শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনকে আলোকিত করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যে মুহূর্তে জাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে ঠিক সেই মুহূর্তে সরকার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা জাতির জন্য আত্মঘাতী। এই মুহূর্তে প্রয়োজন হলো শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে আদর্শ ও আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তোলা। অথচ তা না করে কোমলমতি প্রজন্মকে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার মূলত শিক্ষার্থীরেকে নৈতিকভাবে অবক্ষয় ও অনৈতিক সমাজ গঠনে উৎসাহিত করছে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানানো হলেও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বরং এর পরিবর্তে নৃত্য, গান, বাজনা শিখানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করার উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে , যা আমাদের নিকট অত্যন্ত দুঃখজনক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমরা সরকারকে আরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ধর্মীয় শিক্ষা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; বরং দেশের সকল ধর্মাবলম্বী শিশুর জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয় ও আবশ্যক বিষয়। অথচ সরকারের এই নিয়োগ পরিকল্পনায় ধর্মীয় শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, ফলে ভবিষ্যতে নৈতিক অবক্ষয় ও চরিত্রহীন মানুষ তৈরি করবে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।