পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী, সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী বলেছেন, যে ভাষায় আওয়ামী লীগ কথা বলত, রাজনীতি করত—আমাদের কিছু বন্ধুদের দেখি এখন ওই একই ভাষায় কথা বলছে। সেই একই স্টাইলের রাজনীতি শুরু করেছে। যদি ভাষার পরিবর্তন না হয়, আচরণের পরিবর্তন না হয়, যদি হুমকি ধামকির পরিবর্তন না হয়, যদি জুলুমের পরিবর্তন না হয় তাহলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কী দরকার ছিল? এত মানুষের জীবন দেওয়ার কী দরকার ছিল?
আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা বাজার, বাবুরহাট বাজার ও বুইচাকাঠি বাজারে গণসংযোগকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ রাজাকার রাজাকার ব্যবসা করেছে। দেশে বিভাজনের রাজনীতি করেছে। দেশে ঐক্যের বদলে অনৈক্যের বীজ বুনেছে। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ফুঁসে উঠেছিল। যার ফলশ্রুতিতে জুলাই বিপ্লব এসেছিল। আজকে আমাদের কিছু রাজনৈতিক বন্ধু আবার সেই রাজাকারের ব্যবসা শুরু করেছে। এতকাল আপনাদের সঙ্গে ছিল, তখন কি তারা রাজাকার ছিল না? ২৫ বছর জোট করে আন্দোলন করলেন, সংগ্রাম করলেন, কর্মসূচি পালন করলেন, তখন জামায়াত ইসলামী রাজাকার ছিল না? তখন যদি জামায়াত রাজাকার না হয়ে থাকে আজকে হঠাৎ করে কেন জামায়াত রাজাকার হলো? আমাদের দেশে এখনো দুর্নীতি হয়, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বললে সাংবাদিকের জীবন চলে যায়। এগুলো আমাদের ভাবতে হবে। শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন হলেই দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। এগুলো আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
ভারতের অপরাজনীতির কথা উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, বাংলাদেশে বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু করার ষড়যন্ত্র করছে ভারত। বাংলাদেশে বিভাজনের যে রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেছিল ভারতের কিছু পৌষ্য দালাল বাংলাদেশে আছে যারা এখনো আমাদের মধ্যে সেই বিভাজনের রাজনীতি চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বিভাজনের কোনো রাজনীতি দেশবাসী মেনে নেবে না।’
মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘আমরা বিভাজনের রাজনীতি চাই না। আমরা বাংলাদেশের শান্তি চাই, আমরা ঐক্য চাই। আমরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে চাই।’
দাঁড়িপাল্লায় ভোট চেয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘পাঁচ'শ মানুষের জন্য একটি মসজিদে যখন ইমাম নির্বাচন করেন, তখন আপনারা দেখেন তিনি নিজে নামাজী কিনা, তার পরিবার নামাজী কিনা, তারা শরিয়ত মোতাবেক চলে কিনা, দুর্নীতি করে কিনা—এসব দিক বিবেচনা করে মসজিদে একজন ইমাম নিয়োগ করেন। ৫০০ জনের একজন ইমাম নিয়োগ করতে যদি এত যাচাই-বাছাই করেন তাহলে তিন-চার লাখ মানুষের যে ইমাম (নেতা) হবে, এই সংসদীয় আসনের যে ইমাম হবে, তাকে কি আপনারা এইভাবে বাছাই করে দেখবেন না? যদি এইভাবে বাছাই না করেন তাহলে নিশ্চিত থাকেন অতীতে যেভাবে জালিমেরা জুলুম করেছে, নির্যাতন করেছে, দুর্নীতি-লুটপাট করেছে, আমাদের তকদিরে ঠিক একইভাবে সেই রকমই কোনো সরকার আবার চেপে বসবে।
পিরোজপুরকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার কথা উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, আমার সম্মানিত পিতা শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী উন্নয়নের একটি রোডম্যাপ ধরে পিরোজপুরকে সাজানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু জালিমেরা তা সহ্য করতে পারেনি। তাকে মিথ্যা অপবাদে ১৩ বছর কারাগারে রেখে আওয়ামী লীগ তাকে বিচারিক হত্যা করেছে। আমি যদি আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আপনাদের ভোটে আপনাদের (পিরোজপুর-১ আসন) খাদেম হতে পারি তাহলে আমি আল্লামা সাঈদীর অসম্পূর্ণ কাজগুলো সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ।’
শেখমাটিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মাওলানা আব্দুর রবের সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন সেক্রেটারি জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় এ সময় আরো বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক শেখ, নাজিরপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, নাজিরপুর উপজেলা বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা আবু দাউদ, শেখ মাটিয়া ইউনিয়ন সভাপতি হাফেজ আব্দুর রহমান, সেক্রেটারী মাওলানা কাজী জাকির হোসাইন, উপজেলা শিবির সেক্রেটারী সাকিব হোসাইন প্রমুখ।