নোয়াখালীর চর বাগ্গা থেকে মোঃ বোরহান উদ্দিন, মোঃ আবু তাহের ও নাফিস ইকবাল : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী সন্ত্রাসী দ্বারা নির্যাতিতা গৃহবধূর প্রতি এবং তার স্বজনদের খোঁজ-খবর নিতে তাদের বাড়িতে এসে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান।
নোয়াখালী সূবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের চরবাগ্গা গ্রামে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নির্যাতিতা নারীর প্রতি সমবেদনা জানাতে এসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছিলো। সেদিন মানুষ মুখ ফুটে প্রতিবাদ করতে পারে নাই, আমরাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে পারি নাই, পাশে এসে দাঁড়াতে পারি নাই। এই চিত্র বাংলাদেশে কমবেশি থাকলেও ঠিক এতো নিকৃষ্ট মানের উদাহরণ বাংলাদেশে খুব কম আছে এখানে যা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, মানুষের বিবেকের আদালত হলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আদালত। একটা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার মানবিক সমাজ আজ আমাদের বড়ই প্রয়োজন। আমরা আমাদের অস্তিত্ব অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। এই জাতীয় অস্তিত্ব পাওয়ার লড়াই সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। এটি হচ্ছে মর্যাদার লড়াই, মানুষের পরিচয়ে মানুষ হিসেবে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার লড়াই, নিরাপত্তার লড়াই। সেই লড়াই যদি আমরা জয়ী হতে পারি মহান আল্লাহ তায়ালা বাংলাদেশের মানুষকে এক মানবিক বাংলাদেশ দিবেন। সেই মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের আপোষহীন সংগ্রাম এবং লড়াই অব্যাহত থাকবে। যেখানেই মজলুম সেখানেই আমরা চেষ্টা করবো বাজপাখির মতো উড়াল দিয়ে হাজির হতে। গিয়ে বলবো আপনার উপর যে জুলুম হয়েছে আমাদের উপরই সেই জুলুম করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর কসম আমাদের এই ধান্দা নাই ক্ষমতায় গিয়ে মানুষের উপর লাঠি ঘুরাবো, ক্ষমতার গরম দেখাবো, জনগণের টাকা আত্মসাৎ করবো, নিজের কপাল অবৈধভাবে বড় করার চেষ্টা করবো এগুলো আমাদের ইচ্ছা নই। আমরা আল্লাহর পথে চলে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার কাজ করবো।
জামায়াতে আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন এখানে নির্যাতিত মহিলা যদি আপনার মা হতো, বোন হতো তাহলে আপনার অনুভূতি কেমন হতো। সকলের নিকট দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যেনো আমাদের বোনের ইজ্জত আরো বাড়িয়ে দিক। একজন মায়ের সম্মানের মূল্য আমাদের জীবনের চেয়ে বেশি কিন্তু পশুরা বুঝলো না। এর উপযুক্ত বিচার সে আল্লাহ তায়ালার আদালতে আখেরাতে পায় সেই দোয়া কামনা করে জামায়াতে ইসলামী আমীর তার বক্তব্য শেষ করেন।
এ সময় আমীরে জামায়াতকে দাগনভুঁইয়া থেকে নোয়াখালী জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা সাইয়েদ আহমেদ, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা বোরহান উদ্দিন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর মাওলানা মেছবাহ উদ্দিন এবং নোয়াখালী শহর সেক্রেটারি মাওলানা মায়াজ আমীরে জামায়াতকে সুবর্ণচর উপজেলার চর বাগ্গায় শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চর বাগ্গায় পৌঁছলে বিপুল জনতা ও নেতাকর্মীরা তাকে নারায়ে তাকবীর ধ্বনিতে অভিবাদন জানান। এসময় তিনি নির্যাতিতা গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তাকে সমবেদনা জানান এবং হাদিয়া উপহার দেন।
নোয়াখালী সংবাদদাতা : এর আগে গত সোমবার রাতে মাইজদির এক পথসভায় বলেন, যতদিন আমরা ন্যায় ও কল্যাণের পথে থাকবো, ততদিন আপনাদের সহযোগিতা চাই। কিন্তু যদি আমাদেরকে দেখেন আমরা জনগণের প্রত্যাশা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করছি, অন্যায় করছি, চাঁদাবাজি করছি; তাহলে আপনারা আমাদের কঠোর সমালোচনা করে মেরুদণ্ড সোজা করে দেবেন এ রকম উদাত্ত আহবান জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সোমবার রাত সাড়ে আটটার নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, যারা দেশের জন্য লড়াই করে জীবন দিয়েছে,তারা আমার ভাই? সেদিন আমাদের মায়েরা, বোনেরা, বাবারা, লক্ষ-লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল কেন? কারণ এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ। একটা গোষ্ঠী ছাড়া, সেই গোষ্ঠীটি আপনারা সকলেই চিনেন যারা দেশকে বহুমূখী সংকটে ফেলে দিয়েছে,আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, যাতে কোনোদিন আমরা জুলুমবাজ হয়ে না যাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলুমবাজরা আল্লাহর দুশমন। তাই তাদের প্রতি আল্লাহর লানত।
নোয়াখালীর সংগ্রামের ইতিহাস স্মরণ করে তিনি বলেন, নোয়াখালীর মাটিতেও ২০১৩ সালে অনেক রক্ত ঝরেছে। তাদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার আমার সুযোগ হয়েছে। তাদের মায়ের কান্না, বাবার কান্না ও সন্তানের কান্না আমার নিজের কানে শোনার সুযোগ হয়েছে। তারা দেশকে একটা জাহান্নামে পরিণত করতে চেয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্যে ডা. শফিকুুর রহমান আহতদের চিকিৎসা ও শহীদ পরিবার পূনর্বাসনের ব্যাপারে অবহেলা করবেন না, সহযোগিতা করতে আমরা আপনাদের পাশে আছি,এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, নচেৎ আমরা আপনাদের বিপক্ষে যাব।
নোয়াখালী শহর জামায়াতের আমির মাওলানা মো. ইউসুফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভুঁইয়া, নোয়াখালী জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা সাইয়েদ আহমদ, নোয়াখালী জেলা সেক্রেটারী মাওলানা বোরহান উদ্দিন, এডভোকেট জহুরুল আলম, এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, শহর সেক্রেটারী মোহাম্মদ মায়াজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পথ সভায় বক্তব্য রাখেন। এরপর তিনি রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফেনীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।