আদর্শ, ন্যায় ও ইনসাফ পূর্ণ কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে নৈতিকতা সম্পন্ন যুব সমাজ দরকার উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশ জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে যুব সমাজ। অথচ আমাদের দেশে তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের মেধার বিকাশে রাষ্ট্রের কোন অবদান নেই। বরঞ্চ যুবকদের মেধা ধ্বংসের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন হয়ে আছে। বহু কষ্টে কিছু যুবক তাদের নিজ মেধাকে বিকশিত করার জন্য সংগ্রাম করছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্র গুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দলীয় অন্ধ আনুগত্য না থাকলে ব্যক্তির মেধা ও যোগ্যতা যত বেশিই হোক না কেন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কোন ভালো স্থানে দায়িত্ব দেওয়া হয় না। একটা মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার তার কথা বলার অধিকার। ন্যায়ের পক্ষ নেয়া এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। আজকে সেসব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়ে অনেক সম্মানিত ব্যক্তিকে অপমানিত করা হয়ে। আর যুব সমাজ তারা তাদের নেতৃত্ব সৃষ্টির উন্মুুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না। তাদের উপরে জোর করে সবকিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব যুবকেরা গত তিন তিন বারের নির্বাচনে নিজের ভোট সমর্থন দেয়ার সুযোগ পায়নি। এখনই সময় সকল জুলুমের অবসান ঘটিয়ে দেশ এবং জাতির কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ভুমিকা রাখার। খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন পশ্চিম শিরোমনি ইয়াং সোসাইটি আয়োজিত নাইট ফেস্টিভ্যাল ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

ইয়াং সোসাইটির সভাপতি মুরসালিন হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, খানজাহান আলী থানা ছাত্রশিবির সভাপতি আল ইমরান শেখ, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, শেখ শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। উক্ত ফাইনাল ম্যাচে ট্রাইবেকারে ২-১ গোলে ড্রিম আইটি গ্যালাক্সি অফ শিরোমণিকে পরাজিত করে।

প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় যুব সমাজকে মাদক মুক্ত ও ফিট রাখতে ইয়াং সোসাইটির এ ধরনের আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনের সার্বিক কার্যক্রমে ইয়াং সোসাইটির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশ আজও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও শান্তি অর্জনে পুরোপুরি পৌঁছায়নি। যুব সমাজ বেকারত্ব, সন্ত্রাস, মাদক, অর্থপাচার ও অশ্লীলতার মতো সমস্যার কারণে হতাশা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে। তিনি বলেন, এই সমস্যাগুলো সমাধানে ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলা জরুরি। তিনি যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ও সমাজে স্থায়ী পরিবর্তন আনার জন্য যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমরা যদি ইসলামের নীতি ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাই, তবে একটি সুন্দর ও কল্যাণময় ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব।’

তিনি বলেন, আজকের যুবকদেরকে রাসূল (সা.) এর জীবন চরিত সম্পর্কে জানতে হবে। তার জীবন চরিত থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি কোন যুবক, চলতে পারে তাহলে অবশ্যই সে সফলকাম হবে। মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সবাইকে সচেতন করতে রাসূল (সা.) এর জীবন আদর্শ জানা অপরিহার্য। তাঁকে অনুকরণ ও অনুস্মরণ করার মাঝেই মানবতার কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আদর্শ যুব সমাজ প্রতিষ্ঠায় জামায়াত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের যে কোন সমস্যায় যুবকেরা যুগে যুগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশে কোন সমস্যা সমাধান বা উন্নয়নে যুবক সমাজের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার কারণ সৎ যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। ইসলামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্দশ ও যোগ্যতাসম্পন্ন যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভুমিকা রাখার আহবান জানান।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৯টায় খানজাহান আলী থানার গিলাতলা ৫নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে মহিলা সমাবেশ ওয়ার্ড সভাপতি সরওয়ার হোসেন নজরুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি এস এম হেকমত আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, খানজাহান আলী থানা আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেখ ইসারাত আলী, হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাস্টার হেলাল উদ্দিন প্রমূখ।

এর আগে ৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ৭টায় খুলনা-৫ আসনের কার্যালয়ে ডুমুরিয়া ও ফুলতলার ইউনিয়ন সভাপতি সম্মেলন জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও গাউসুল আজম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, ছাত্রশিবিরের খুলনা উত্তর জেলা সভাপতি ইউসুফ ফকির, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্লা, খানজাহান আলী থানা আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, ফুলতলা উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান, ডুমুরিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মাষ্টার আব্দুর রশীদ বিশ্বাস ও খানজাহান আলী থানা সেক্রেটারি গাজী মোরশেদ মামুন প্রমুখ।

ফুলতলায় পৃথক দুটি ইউনিয়নে ভোটার সমাবেশ : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গণভোটের দাবি কোন রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে উপেক্ষা করলে জাতীয় নির্বাচন সংকটের মুখে পড়তে পারে। তাই অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারী করতে হবে এবং গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্ট বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য দলেরও নোট অব ডিসেন্ট আছে। ফলে ঐকমত্য কমিশন গণভোটের জন্য যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে সেটিকে চূড়ান্ত করে গণভোটের প্রস্তাবনা তৈরি করতে হবে। সেখানে কোন নোট অব ডিসেন্ট যুক্ত হবে না, এটিই হচ্ছে গণদাবি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংকট নিরসনে পারস্পারিক আলোচনার প্রস্তাবকে জামায়াতে ইসলামী স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ইতোপূর্বে বিএনপিসহ সকল দলকে আলোচনায় বসে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব একমত হওয়ার ব্যাপারে আগেই প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারকেই মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারকে সব ধরণের সহযোগীতা করার জন্য প্রস্তুত আছে। তিনি আরও বলেন, সময় ক্রমশই ফুরিয়ে যাচ্ছে ফলে তফসিল ঘোষণার আগেই গণভোটের তফসিল ঘোষণা হওয়া জরুরি, এটিই হচ্ছে গণদাবি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে সব সংস্কার বিষয়ে একমত প্রতিষ্ঠা হয়েছে । জুলাই সনদে সাক্ষরকারী দল সমূহের সেই সব বিষয়ে এখন ভিন্নমত পোষণ করা অথবা নোট অব ডিসেন্টকে গণভোটে যুক্ত করার দাবি হচ্ছে অন্যায় দাবি। এ গুলো পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার স্বার্থে অবিলম্বে নোট অব ডিসেন্ট ছাড়াই গণভোটের প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের তারিখ ঘোষণা জরুরি। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সরকারের ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের ডেট লাইন ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। এ জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, গণহত্যাকারীদের বিচার, ফ্যাসিস্টের দোসরদের বিচার নিশ্চিত করারও দাবি জানান। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খুলনা-৫ আসনের ফুলতলা উপজেলার ৪নং ফুলতলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে যুগ্নীপাশায় ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

সৈয়দ আবু জাফর এর সভাপতিত্বে ও শেখ জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি গাউসুল আজম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম ও এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, ফুলতলা উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল আলীম মোল্লা, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আলী আকবর মোড়ল, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ড. আজিজুল হক, ছাত্রশিবিরের খুলনা জেলা উত্তর এইচ আরডি সম্পাদক হুসাইন আহম্মেদ, জেলা পাঠাগার সম্পাদক বোরহান হোসেন, ফুলতলা থানা সভাপতি আব্দুর রহীম, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম, ইউনিয়ন সেক্রেটারি হাফেজ আল আমীন প্রমুখ।

পরে রাত সাড়ে ৭ টায় আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের মশিয়ালী দক্ষিণপাড়ায় ১নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ভোটার সমাবেশে সেক্রেটারি জেনারেল প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা রবিউল ইসলাম এবং সেক্রেটারি কামাল হোসেনের পরিচালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের পর নির্বাচন হলে তা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তিনি বলেন, ২৪-এর গণআন্দোলনের ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আর আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই দ্বিতীয় যুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে পাঠাতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব পেলে প্রথম কাজ হবে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে এমন ব্যবস্থা চালু করা, যাতে সবার শিক্ষা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন।