জনগণকে বিভ্রান্ত না করে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, বিএনপি ঝগড়া করার উসকানি দিলেও তাতে জামায়াত তাদের উসকানিতে পা দেবে না। ডা. তাহের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন পৃথিবীতে একটি নজিরও নেই যে, নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে গণভোট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির কাছে প্রমাণ করুণ কোথায় জামায়াতে ইসলামী মিথ্যা বলেছে আর কোথায় প্রতারণা করেছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেন জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইন ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন আমরা আলোচনায় বিশ্বাসী। পৃথিবীতে নজির রয়েছে, একদিকে যুদ্ধ অন্যদিকে আলোচনা। ফিলিস্তিনে আর ইউক্রেনে এক দিকে যুদ্ধ চলছে। অন্যদিকে আলোচনা চলছে। আমরাও আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
ডা. তাহের বলেন, আপনারা দেখেছেন দেশের রাজনীতিতে এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্তায় বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আসছে এবং জামায়াতকে নিয়ে কিছু বক্তব্য আসছে। আমরা একটি কথা শুনতে পাচ্ছি যে সরকার একধরণের সমঝোতার দিকে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে কিছুটা তোমাকে সন্তুষ্ট করবো, কিছু অন্যদের সন্তুষ্ট করবো। তিনি বলেন বিষয়টিতে হালুয়া রুটির বিষয় নয়। এটি হচ্ছে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয়ে খুব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কোনরকমের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি।
ডা. তাহের বলেন, ল পরিবর্তন হয়েছে, ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, ব্যাক্তিদের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু‘ নীতিগত মৌলিকভাবে পরিবর্তন হয়নি। যারাই ক্ষমতায় গিয়েছেন, দলীয় করণ আত্মীয়করণ, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিজের কর্মীদের প্রতিপক্ষের প্রতি উস্কে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন প্রতিপক্ষ দলগুলোর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। যখন অন্য দল ক্ষমতায় ছিল তারাও একই কাজ করেছে। ৫৪ বছরে কোন পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু এবার জনগণের অংশগ্রহণে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবা জালেম লুটপাট ও বিেেশর আনুগত্যতারী ও সার্বভৌমত্ব বিক্রিকারী নির্মম ফ্যাসিস্ট সরকারকে সকলে মিলে বিতারণ করেছি। এরমাধ্যমে মানুষ আশা করেছিল যে এবার অন্তত বাংলােেশ গুণগত পরিবর্তন হবে। কিš‘ একবছর পর এসে হতাশ হয়ে দেখছি যে, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে আকস্মিক চরিত্র বদল হওয়া।
তিনি প্রধান উপষ্টোর প্রসংশা করে বলেন তিনি দুর্নীতির উর্ধ্বের মানুষ। তিনি ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছেন। সে কারণে আমরা ৩১টা রাজনৈতিক দল একমত হয়েছি। গণভোট নিয়েও কথা বলেন ডাক্তার তাহের। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন মেজরিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং বিএনপির মহাসচিব এবং একজন ¯’ায়ী কমিটির সদস্য সাক্ষর করেছেন। তাদের পাশে আমরাও ছিলাম। সেখানে হাসি ঠাট্টা হয়েছে। কিš‘ হঠাৎ করে বিএনপি ফোঁসে উঠেছে। মনে হলো রাতে কোন স্বপ্ন েেখছেন। এখানেতো ঐকমত্য কমিশন এবং সরকারের ব্যাপার। জামায়াতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আমরা বুঝে শোনে সাইন করেছি। দ্বিমত করার সুযোগ নাই। ওনারা হয়তোবা বুঝে করেনি।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বললেন বিএনপি সংস্কারের বাবা। আবার আরেক নেতা বললেন তারা সংস্কার মানেন না। সংস্কারের প্রয়োজন নাই।
তারা বলে জামায়াতে ইসলামী মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। যেহেতু বিএনপি বলছে আমরা মিথ্যা বলছি তাহলেও আমারে সেটা জানার অধিকার আছে। আমি মির্জা ফখরুলকে অনুরোধ করবো তিনি যেন, আগামিকাল (আজ সোমবার) জামায়াতে ইসলামী কোন কোন পয়েন্টে মিথ্যা বলছে সেটা তিনি জাতির কাছে পরিষ্কার করবেন। আরেক জায়গাতে বলেছেন জামায়াতে ইসলামী প্রতারণা করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলেছেন। ওনার নিজেদের কথায় বেকায়দায় পরে যান। কিন্তু আমাদের কোন কথায় তারা বেকায়দায় তা আমরা টের পাচ্ছি না। আমি বলবো বিষয়গুলো পরিষ্কার করবেন। ওনারা একেক জন একেক চেপ্টার নিয়েছেন একেক জন। তাদের এক নেতা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীকে ব্যান করা উচিত। খুব ভালো। তিনি ১৯৯১ সালে জামায়াতের সহযোগিতায় সরকার গঠনের ইতিহাস মনে করিয়ে দেন। যখন কোন দল মেজরিটি পায়নি তখন আমাদের সহযোগিতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। আমরা যাদের সরকার গঠনে সহযোগিতা করলাম তারা আজ উল্টো কথা বলছে। ডাকসু, জাকসু, রাকসুতে জয় পাওয়ায় বিএনপি ভয় পাচ্ছে বলে ইঙ্গিত েিয় বলেন, বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ ধারণ করেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব বললেন জীবনেও তারা গণভোটে যাবেন না। তাহলে কি তার ভয় পাচ্ছেন যে, গণভোটেও যদি এমন কিছু হয়ে যায়! তিনি বিএনপিকে গণভোটে হ্যাঁ ভোটের পক্ষে থাকার আহ্বান জানান।
উদাহরণ টেনে ডা. তাহের আরও বলেন, আমরা ওপেন ডিভেট করতে রাজি আছি। তারা আসুক। জামায়াতে ইসলামী কখনোই মোনাফেকী করে না। আমরা জাতির সামনে ওপেন ডিবেট করবো।
গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার এক বিষয় আর জাতীয় নির্বাচন আরেক বিষয়। যেকোন সময় সংস্কার আমরা করতে পারি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের নির্বাচন। বিএনপি বলছেন গণভোট করতে অনেক টাকা রকার। জাতির পরিবর্তনের জন্য কিছু টাকাতো খরচ হবেই। চাঁদাবাজ দখলবাজদের সুবিধা করার জন্য বিনা প্রক্রিয়ায় চলে যাবো সেটাতো হবে না। তিনি এক নেতাকে ধন্যবা জানিয়ে বলেন, তিনি জানিয়েছেন, গত ১৪ বছর আর ড. ইউনূস সাহেবের এক বছরে যত পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে, টাকা পাচার, ব্যাংক ডাকাতির টাকা দিয়ে একহাজার গণভোট করা যাবে। ওনারা গণভোটের টাকা নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু এক হাজার গণভোটের টাকা যে চাঁদাবাজিতে চলে গেছে সেটা নিয়ে কোন কথা বলছেন না।