হুসাইন বিন আফতাব: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের গুজব ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শ্যামনগর উপজেলার নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও সরেজমিনে গিয়ে ভিডিওতে প্রদর্শিত হাসপাতাল এবং শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে অবকাঠামোগত মিল পাওয়া যায়নি। একইসাথে ভাঙচুর বা হামলার কোনো আলামতও সেখানে দেখা যায়নি।
গত ৯ আগস্ট, শনিবার রাতে একটি অজ্ঞাত স্থানে ধারণ করা একটি হাসপাতাল ভাঙচুরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, শ্যামনগর উপজেলা জামায়াত ও শিবিরের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেইনগেট, আসবাবপত্র, চেয়ার-টেবিল কিংবা অন্যান্য স্থাপনায় কোনো ধরনের ভাঙচুরের চিহ্ন নেই। বরং হাসপাতাল যথারীতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, “আমাদের হাসপাতালে এমন কোনো ঘটনার খবর নেই। কোথাকার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সেটাও আমি জানি না। আমাদের হাসপাতালে কোনো ভাঙচুর বা মারামারির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।”
হাসপাতালের রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমি নিজেও ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছি। ভিডিওটির সাথে শ্যামনগর হাসপাতালের বাস্তবতা মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। গত কয়েক বছরেও এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই গুজব রটিয়েছে।”
স্যাকমো মোঃ শাকির হোসেনও একই বক্তব্য দিয়ে বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। এটি শ্যামনগরের হাসপাতাল ভাঙচুরের ভিডিও নয়। একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরের উপর দোষ চাপিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে।”।”
ঘটনার বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবদুর রহমান বলেন, “ভিডিওটি কোথাকার, সেটাও কেউ জানে না। অথচ আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরাসরি দোষারোপ করা হচ্ছে। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, এর উদ্দেশ্য আমাদের সাংগঠনিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা।”
তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের উদ্দেশ্য প্রণোদিত গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যারা সামাজিক মাধ্যমে এভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি।”
বর্তমানে এ ঘটনায় এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয়দের অনেকে এটিকে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে একটি সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন এ ধরনের গুজব বন্ধে কঠোর নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।