বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা আশা করি, মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করে অতিদ্রুতই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের পথে এগুবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদের স্মরণে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, এতো সমস্যার পরেও ১২টা মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত্য এসছে, বাকিগুলোতে ঐক্যমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, প্রতিদিন বৈঠক হচ্ছে কয়েক ঘন্টা ধরে, অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলো আমরাও ঠিক বুঝি না যে তারা যেগুলো করতে চান। আমার মনে হয়, এগুলোকে বাদ দিয়ে যে মৌলিক বিষয়গুলো আছে সেই বিষয়গুলোর সমাধান করে অতিদ্রুত নির্বাচনের যেটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেছে লন্ডনে তারেক রহমান এবং আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের মধ্য দিয়ে যে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে নির্বাচনটা হবে। আমার মনে হয় সেটা হলেই বোধহয় অনেক সমস্যা, অনেক দ্বিধা কাটিয়ে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অনুরোধ করব এতোটা হতাশ হবেন না, নিরাশ হবেন না। আমরা যদি পারি অতীতে, আমরা যদি সেই ’৫২ ভাষা আন্দোলনের সফল হতে পারি, ’৬৯ এর সফল হতে পারি, ’৭১ সফল হতে পারি, ’২৪ এ সফল হতে পারি উইথ অল লিমিটেশনস, তাহলে আমরা এটাও পারব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি কারো সমালোচনা করতে চাই না। আজকের সময়টা হচ্ছে পারস্পরিক একটা বুঝাপড়ার। একটু বুঝে নিয়ে পরস্পরকে বুঝে আমরা যদি খুব দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি তাহলে ফলটা লাভ করবে জনগণ, তার একটা প্রতিনিধিত্ব থাকবে, তার একটা সরকার তৈরি হবে। এটা যে সব সোনা হয়ে যাবে, সব কিছু সমস্যাগুলো মিটে যাবে তা কিন্তু না। কিন্তু একটা রাস্তা তৈরি হবে যে রাস্তার মধ্য দিয়ে আমাদের কথাগুলো, জনগণের কথাগুলো সেই সরকারের কাছে পৌঁছাবে, পৌঁছাতে পারবে, সেই জায়গাটাতে আমরা যেতে চাই।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক একটা বুঝাপড়া থাকতে হবে। এই বুঝাপড়া না থাকলে এই যে আমরা কাঁদাছুড়াছুড়ি করছি, গণতন্ত্রের কাঁদাছুড়াছুড়ি হবে, অনকে কথা আসবে কিন্তু এর একটা সীমা থাকা দরকার। তা না হলে যেটা হয় একটা তিক্ততা সৃষ্টি হয়। যে তিক্ততা ভবিষ্যতে গিয়ে রাজনীতিকে আরও কুলষিত করে।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার আগে ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও জুলাই অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনে ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এরপর জাতীয় প্রেসক্লাব পাঁচজন সম্পাদক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ, যায় যায় দিনের শফিক রেহমান, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ এর মাহমুদুর রহমান, নিউজ এজ‘র নুরুল কবীরকে সন্মাননা প্রদান করে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দুই শহীদ পরিবারের সদস্যদেরও সন্মাননা দেয়া হয়।

এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেনকে বিশেষ সন্মননা প্রদান করে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি। যা তাদের হাতে তুলে দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ।

মির্জা ফখরুল বলেন, একজন মা তার ছেলে ছবি দেখালেন যে শহীদ হয়ে গেছে, আরেকটা ছোট ছেলে আশুলিয়ার অনুষ্ঠানে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ওর বয়স ৬/৭ বছর হবে, আমার মাথাটা না খুলিটা নেই। খুলিটা প্লাস্টিকের, অর্থাৎ গুলীতে তার মাথার খুলি চলে গিয়েছিলো। পরে ডাক্তার সাহেবরা সেটাকে প্লাস্টিক দিয়ে আর্টিফিশিয়াল খুলি তৈরি করে লাগিয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে বড় ত্যাগ আর কি হতে পারে?।

২০১৪ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের একদিন অবরুদ্ধ থাকার পর গ্রেফতার হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আমার অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা আমি আর বর্ণনা করতে চাই না। কারণ সেটা আমার জন্যে সুখের নয়, আনন্দের নয়। তবে এটাকে ওইসময়ে স্বাভাবিক মনে করেছি। যখন আমি ক্লাবের গেইটের বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোহার বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে গাড়িটাকে পেটানো শুরু হলো, আমার তখন ওই মুহুর্তে মনে হয়েছিলো, আর বোধহয় জীবন্ত অবস্থায় আমি ফিরে যেতে পারব না। যাই হোক ফিরে এসেছি, আপনাদের সামনে কথা বলছি। আমরা যারা গুটিকতক সৌভাগ্যবান যারা এখনো আমরা বেঁচে আছি, আপনাদের সাথে বলার সুযোগ পাচ্ছি।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বড় বাধা এলিটিজম বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, যতদিন না আমরা সকল সাংবাদিক ও সম্পাদককে এক নজরে দেখতে না পারব ততদিন পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্ণবাদের মত পত্রিকার সম্পাদকদের শ্রেণিবিভাগ আছে। একদল হলেন এলিট সম্পাদক, আরেকদল হলো নমশূদ্র সম্পাদক। আজকে আমি ধন্য যে পাঁচজনের নাম বললেন তার মধ্য ব্রাহ্মণ সম্পাদক আছে আবার নমশূদ্রও আছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মধ্যে দুইটা ব্রাহ্মণ প্রতিষ্ঠান আছে। একটা হলো সম্পাদক পরিষদ আরেকটা হলো নোয়াব। আমি যাকে বলি নবাব। সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের সদস্য আমরা যারা নই তারা আমরা নমশুদ্র সম্পাদক। এলিট সম্পাদক না হলে নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদের সদস্য হওয়া যায়না। আজকে দুই গ্রুপই এখানে আছে দেখে ভাল লাগছে।

এলিট সম্পাদকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে নিউ এইজের সম্পাদক নূরুল কবীরের বিরুদ্ধে ডিজিএফআই নানা রকম ঝামেলা করছিলো তখন মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান আমাকে ফোন দিয়েছিলো একটা বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য। তখন আমি বলেছিলাম-রাজপুত্র (সজীব ওয়াজেদ)র দুর্নীতি নিয়ে একটা নিউজ করেছিলাম তার বিরুদ্ধে। এরপর আমার সহকর্মী আব্দুল্লাহর ওপর হামলা হয়েছে, আমার গাড়িতে তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেছিলো, আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। পরে আমি আমি মতিউর রহমান ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আমার ওপর ও আমার সহকর্মীর ওপর আক্রমণ হলো আপনারা তো কোন বিবৃতি দেন নাই- আমি আবার প্রশ্ন করলাম এই বিবৃতিতে আব্দুল্লাহর নাম থাকবে কি? তিনি বললেন না এটা শুধু নূরুল কবীরের নাম থাকবে, পরে আমরা আব্দুল্লাহর নাম দিবো। আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি এটাতে সই করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

এই বিষয় নিয়ে নূরুল কবীর সাহেব খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। আমি যখন জেলে ছিলাম তখন নূরুল কবীর দুই একটি টেলিভিশনে টকশোতে বলেছিলো আমার বিরুদ্ধে যখন অত্যাচার হয়েছে তখন মাহমুদুর রহমান বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে নাই। এটা অস্পূর্ণ অসত্য বলেছিলেন। ওইখানে আব্দুল্লার নাম না থাকায় আমি স্বাক্ষর করি নাই। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার বড় সমস্যা এলিটিজম। যতদিন না আমরা সকল সাংবাদিক ও সম্পাদককে এক নজরে দেখতে না পারব ততদিন পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নাই।

আমার দেশ পত্রিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের লড়াই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে, আমার দেশের লড়াই মানবাধিকারের পক্ষে, আমাদের লড়াই ছিলো ভারতীয় হেজেমনির বিরুদ্ধে। আমাদের এই লড়াইয়ে বিএনপি কখনো বলে নাই জামায়াত কখনো বলে নাই এভাবে পত্রিকা চলতে হবে। আমি নিজের তাড়না থেকে পত্রিকা চালিয়েছি। তাতে করে লাভবান হয়েছে তৎকালীন বিরোধী দল অর্থাৎ বিএনপি ও জামায়াত।

মাহমুদুর রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন জনসভায় আমার দেশ পত্রিকা নিয়ে যেতো। জনসভায় পত্রিকা উঁচু করা দেখাতো আজকে আমার দেশে কি লিখেছে। আমি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। তখন আমাদের চিহ্নিত করত বিএনপিপন্থি, সুতরাং মাহমুদুর রহমানের উপর নির্যাতন করা জায়েজ। চিহ্নিত করার মাধ্যমে নির্যাতন করা সহজ হতো কারণ মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন করলে কোন সাংবাদিক সংগঠন ও সম্পাদক বিবৃতি দিবেনা। এটা ছিলো সাংবাদিকতার বাস্তব অবস্থা। এটা ভুলে গেলে চলবেনা। এখন আমাদের চিহ্নিত করছে ইসলামপন্থি, দক্ষিণপন্থি হিসেবে। এটা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে যেন আমাদের উপর আবারো নির্যাতন করা যায়। কারণ ব্র্যান্ডিং না করলে আপনি জুলুম চালাতে পারবেন না। এতে আমি খুব আশ্চর্য হই না। কারণ বাংলাদেশ রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা।

এনসিপির অন্তঃকোন্দল নিয়ে নিউজ হয়েছে আমার দেশ পত্রিকা। তারা সেই নিউজ নিয়ে মন্তব্য করেছে, মজলুম যখন জালিম। এরপর বিএনপির ইশরাকের যখন আন্দোলন চলছিলো তখন আমাদের নিউজ ইশরাক ও বিএনপির পছন্দ হয়নি।ইশরাক তখন তার ফেসবুকে লিখেছে আমার দেশ পত্রিকা একটি গারবেজ। আমার দেশ চালু না হওয়ায় ভালো ছিল। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণুতা। এর থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আসবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ৭১ টিভির মালিক মামলা করেছে। মামলা কেন করতে পারলো আপনি জানেন কারণ তারা জানে তার এত টাকা আছে সে মনে করে সে সব দলকে কিনতে পারবে। আমরা বিভিন্নভাবে খবর পেয়েছি বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সবার সাথে ৭১ টিভির মালিকের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এই ভাবেই বাংলাদেশ চলবে। যাদের হাতে টাকা থাকবে তারাই সব করবে। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ১৭ টা ওয়ারেন্ট আছে। পুলিশ চাইলে যে কোন সময় আমাকে গ্রেফতার করতে পারবে। কারণ আমার বিরুদ্ধে এখনো ১২৫ টা মামলা চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের ভবিষ্যতে মনে হবে, কোন মামলা দিতে হবে না। এই ১৭ মামলা দিয়ে আমাকে ঘায়েল করতে পারবে।

আমার দেশ পত্রিকার ভবিষ্যতে নিয়ে তিনি বলেন, আমার দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটা মোটামুটি আমি জানি। একটা পত্রিকাকে চাপে ফেলতে প্রথমে তারা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেবে। মন্ত্রী মহোদয় বলতে হবে না, খালি সিগন্যাল দিলেই হবে যে সরকারের সঙ্গে “আমার দেশের” সম্পর্ক ভালো না। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালে আমরা সরকারি বেসরকারি কোন বিজ্ঞাপন পাইনি এবং বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায়নি, এখনো পায়না। কারণ আপনারা জানলে অবাক হবে, বেসরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা কোম্পানির নাম এশিয়াটিক। কোম্পানির মালিক সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তার কোম্পানি যেমন আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতাবান ছিল এখনো ক্ষমতাবান আগামীতেও ক্ষমতাবান থাকবে। তাদের কিছুই করতে পারবে না এটাই বাস্তবতা।

সম্পাদকদের দুই শ্রেণির উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণই থাকবে-নমশূদ্ররা নমশূদ্রই থাকবে। যতদিন না আমরা একটি শক্তিশালী বিপ্লব করতে না পারব। সত্যিকার অর্থে আমরা এখনো সেই বিপ্লব করতে পারি নাই। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে প্রেস কাউন্সিলের তালিকা বের হয়েছে- সেখানে যে সম্পাদকের নাম রয়েছে সবগুলো ব্রাহ্মণ সম্পাদক। সেখানে কোন নমশূদ্র সম্পাদক নাই। আজকে আমাদের যে পাঁচজন সম্পাদককে ডাকা হয়েছে তারমধ্যে দুইজন আমরা নমশূদ্র সাংবাদিক। আমি ও আসাদ ভাই। কারণ আমরা ইসলামিক কথা বলি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অপরাধ যারা ইসলামিস্ট কথা বলে। আবুল আসাদ ভাই এই বয়সে যে পরিমাণ নিগৃহীত হয়েছে তার জন্য কয়জন সম্পাদক কথা বলেছে।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা জানে ক্ষমতার সাথে কিভাবে থাকতে হয়। সুবিধার জন্য। আমার দেশ কখনো পারে নাই ভবিষ্যতেও পারবেনা। এখন বিএনপির মিটিংয়ে মাঝে মাঝে দেখি যেসব সাংবাদিকরা কথা বলে তাদের বিগত ১৫ বছরে অবস্থান কি ছিলো। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখনো আসে নাই ভবিষ্যতে আসবে কিনা আমি সন্দিহান। যদি না আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে আদর্শের ভিত্তিতে ইউনাইটেড হতে পারবো তখন সংবাদপত্র স্বাধীন হবে, তার আগে নয়।

মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা একটা হঠকারিতা দেখতে পারছি। আমার ভয় হচ্ছে আমাদের হয়তবা আবার হাত-পা বাঁধা হয়ে যেতে পারে। কোরাজন এগিনো যখন ক্ষমতায় আসেন ফিলিপিনে মার্কোসের ২০ বছরের শাসনের পর তখন তিনি কিন্তু আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন একদিন। তার কারণ ছিলো সব পত্রিকায় এবং টেলিভিশনে এমন সব খবর দেয়া হতো মার্কোসের শাসনের পরে কোরাজন একিনো আসার পরে কোন জেনারেল কোথায় বসে খবর লিখছেন বা কথা বলছেন সেই সমস্ত জিনিস লেখা হতো কাগজে। তখন তিনি সম্পাদক-বার্তা সম্পাদকদের ডেকে বলেছিলেন, আপনারা যা-ইচ্ছা আমার সরকারের বিরুদ্ধে লেখেন কিন্তু এমন কিছু লেইখেন না যাতে আপনাদের হাত-পা আবার বাধা হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি আমি লক্ষ্য করছি, আমি জানি না আমরা ভুলও হতে পারে। এই হঠকারিতার এই সময়ে কথা বলা খুব বিপদজনক। তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা এখানে আছেন, তারা হয়ত বলবেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা, অনেক ধরে নিয়েছেন, বিএনপি হয়ত ক্ষমতায় চলে আসছে। আমরা কেনো যেন মনে হয় রাজনীতি রাজনীতির দিকে নেই। রাজনীতিতে এখনো ভেজাল মুক্ত। সেই ভেজালমুক্ত না হলে ক্ষমতায় আসার হয়ত কঠিন হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, শহীদ আব্দুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা তুজ জোহরা ও শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে মানবজমিন সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য বখতিয়ার রানা, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহেদ চৌধুরী, কাজী রওনক হোসেন, একেএম মহসিনসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।