দেশে জবাবদিহি অবস্থা তৈরি করতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান। গতকাল রোববার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই দেশের মালিকানার একমাত্র দাবিদার এই দেশের সকল নাগরিক, এই সত্যটাকে যদি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, বাক স্বাধীনতার পক্ষে, একটা অবাধ, সুষ্ঠ নির্বাচনের পক্ষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অর্থাৎ একটি একাউন্ট অবস্থা দেশে তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বিএনপি মিডিয়া সেলের আয়োজনে কবিতা পরিষদের কবি ও সাহিত্যিকদের সাথে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কিছু দাবিনামাও তুলে ধরা হয়। কবি-সাহিত্যিকরাও তাদের লেখার স্বাধীনতার কথাও বলেন। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কবি-সাহিত্যিকদের বক্তব্য অধীর আগ্রহে শুনেন এবং সবশেষে নিজে বক্তব্য রাখেন।

কবি-সাহিত্যিকদের এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এবং এরপর একমিনিট দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ ’২৪ সালে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে আত্মদানকারীদের প্রতি।

তারেক রহমান কবি-সাহিত্যিক উদ্দেশে বলেন, আমরা যদি সেটি (জবাবদিহি অবস্থা) করতে সক্ষম হই এখানে আপনারা কবি-সাহিত্যিকরা লেখার স্বাধীনতার কথা বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন, আপনারা মতপার্থক্য তুলে ধরার কথা বলেছেন, সমালোচনার কথা বলেছেন, আমরা সেই অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। যদি আমরা একটি একাউন্টে রাষ্ট্র ব্যবস্থা করে তুলতে সক্ষম হই এবং সেটি একমাত্র করা সম্ভব মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে।

তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সকল শহীদের রক্তের দায় পরিশোধের সময় এসেছে আজ। এদেশের একজন কৃতজ্ঞ সন্তান হিসেবে আজ এই সুন্দর অনুষ্ঠানে আপনাদের-আমাদের সকলের কন্ঠে ঐক্যের প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হোক। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে একটি প্রত্যাশিত বাংলাদেশ, জনগণের একটি প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

দেশের বর্তমান অবস্থা প্রেক্ষাপটে তুলে ধরে তারেক বলেন, আজকের এই শ্রাবণ দিনে যে বিশ্বাস আর প্রত্যয়ের কথা বহু বক্তা এখানে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছেন আমাদের অবস্থান। আমাদের আদর্শিক অবস্থান আমি মনে করি এক এবং অভিন্ন। এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের দৃঢ় অবস্থানের সাথে আমাদের বিন্দুমাত্র পার্থক্য নাই। যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের মানুষ কিছুদিন আগে বিতাড়িত করেছে সেই স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণ প্রতিহত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আপনাদেরই মতন।

তিনি বলেন, আমাদের সাথে হয়ত আপনাদের সকলের আদর্শিক অবস্থান এক নাও হতে পারে। পলিটিক্যাল আইডোলিজ এক নাও হতে পারে কিন্তু এটি কোন সমস্যার বিষয় নয়, এটিকে কেউ দয়া করে সমস্যা হিসেবে দেখবেন। বিষয় হচ্ছে যে, এই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা প্রকাশের জায়গায় কিন্তু আমরা সকলে এক এক।

তারেক রহমান বলেন, কিছু বক্তা এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, আমিও একইভাবে বলতে চাই যে, এই দেশে কোন চরম পস্থা বা মৌলবাদের অভয়ারণ্যে যেন কোনো দিন পরিণত হতে না পারে। সেটিও আমাদের প্রত্যাশা, সেটি আমাদের লক্ষ্য।

তারেক রহমান বলেন, কবি সাহিত্যিকরা যুগে যুগে নিজেদের মাত্রাকে এতটা উঁচুতে নিয়ে গেছেন যার ফলে অনেক সময় দেখেছি, আমরা তাদের নিজেদের পরিচয় দেশ এবং জাতির পরিচয় সমার্থক হয়ে উঠেছে। যেমন উইলিয়াম শেকসপিয়র বা উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ব্যক্তির থেকে ইংরেজী সাহিত্যে নাম হয়ে উঠেছেন। একইভাবে আমরা বলতে পারি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে উঠেন এই মহাদেশের পরিচয়ের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঠিক এমনিভাবে কবিতা ও দেশাত্মবোধ সঙ্গীতকে মুকক্তিযুদ্ধের সাথে একাকার করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে দেশ গঠন ও দেশাত্মবোধের প্রেরণা নিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ এই গানকে তার দল বিএনপির দলীয় সঙ্গীতে পরিণত করেছে অনুপ্রেরণার গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকে।শহীদ জিয়ার সেই আদর্শ আজও সমুন্নত জাতীয়তাবাদের আদেশের প্রতিটি নেতার কর্মীর মাঝে। এজন্যই কবি-সাহিত্যিকরা অসাধারণ, আমরা সাধারণ।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের মন যেটা বলতে চায় বা শুনতে চায় কিন্তু আমরা অনেক সময়ে বিভিন্ন কারণে আমরা প্রকাশ করিতে পারি একটা সীমাবদ্ধ থাকে। আপনারা কবি-সাহিত্যিকবৃন্দ আমাদের সেই অনেকগুলো কথা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন এবং আপনাদের যে মনোজগত আছে সেই মনোজগতের ভিতরে আপনারা স্থান নিতে পারে আপনাদের গুন দ্বারা। সেখানেই কিন্তু আমরা মনে করে নিতে পারি যে, আপনারা অসাধারণ এবং আমরা সাধারণ।

কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান কবি নুরুল ইসলাম মনি, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদি আমীন, আমাদের সময়ের সম্পাদক লেখক আবু সাঈদ খান, কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা কবি মতিন বৈরাগী, সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউল উদ্দিন স্ট্যালিন, সহসভাপতি কবি অনামিকা হক লিলি, কবি এবিএম সোহেল রশীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি শ্যামল জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কবি নুরুন্নবী সোহেল, কবি শাহিন চৌধুরী রাখেন।