# থাকবেন কয়েক শত আমন্ত্রিত অতিথি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বহুল আলোচিত, কাক্সিক্ষত এবং জনপ্রত্যাশিত জাতীয় সমাবেশ আজ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের বার্তা ঘোষণা দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন। সমাবেশে স্টেজে আতিথেয়তা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের অংশীজনসহ আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহত কয়েক শ’ অতিথিকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সারাদেশ থেকে ট্রেন,বাস, নৌ ও সড়কপথে কিভাবে জনগণ এসে সমাবেশে যোগ দেবেন তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ।

ধারণা করা হচ্ছে, সমাবেশ সোহরাওয়র্দী উদ্যান ছাড়িয়ে পুরো ঢাকা নগরী উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে স্ষ্ঠুু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে জামায়াতের পক্ষ থেকে।

আজকের সমাবেশ ঘিরে দলটির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় প্রচারণার উৎসব। অনলাইন ও অফ লাইনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়কদ্বীপ, উড়ালসড়ক ও বিভিন্ন এলাকায় টানানো হয় ব্যানার ও বিলবোর্ড। ঢাকার প্রবেশ মুখসহ মতিঝিল শাপলা চত্বর, কাকরাইল, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ, পল্টন, বাংলামোটর, ফার্মগেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, সায়েন্সল্যাবসহ আবাসিক অনাবাসিক সব এলাকার রোডঘাট অলিগলিতে দেখা গেছে ব্যানার-ফেস্টুন।

রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে দেখা যায়, শাপলার রেলিং ঘেঁষে লাগানো হয়েছে সমাবেশের বিলবোর্ড। সমাবেশের দাবির সাতদফা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রেসক্লাব কদম ফোয়ারায় একইভাবে সজ্জিত করা হয়। এছাড়াও মোড়ে মোড়ে সাঁটানো হয়েছে বিলবোর্ড।

এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত মঞ্চ প্রস্তুত, মাঠ সমান করা, এলইডি মনিটর ও সাউন্ড সিস্টেম বসানো এবং শৌচাগার নির্মাণ শেষ করা হয়। তার আগে সমাবেশ উপলক্ষে রাজনৈতিক দল ও সব ইসলামী সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সারাদেশে দাওয়াতপত্র বিলি করেছে জামায়াত। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হয়েছে প্রচার মিছিল।

সংগঠনের নেতারা জানান, সকাল ১০টায় শুরু হবে সমাবেশ। থাকবে নামাযের বিরতি। শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামী সংগীত পরিবেশন করা হবে। মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে দুপুর ২টায়।

এদিকে সমাবেশকে সফল করতে বেশ কিছুদিন ধরে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং মহানগর নেতৃবৃন্দ। সংগঠনটির প্রত্যাশা সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নিয়ে কর্মসূচি সাফল্যমন্ডিত করবেন। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায় উদ্যানে প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে চলছে। মাঠকে সমাবেশ উপযোগী করতে নিরলস কাজ করছে শত শত কর্মী। নান্দনিক একটি স্টেজ বানানোর শেষ পর্যায়ের কাজ চলমান।

বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর গণআকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন অনুযায়ী মানবিক নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে গোটাজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল বিকালে সমাবেশস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, আমরা খবর পেয়েছি, ঢাকার আশপাশের জেলাসমূহ এবং সারা বাংলাদেশের জেলা, উপজেলা নগর-বন্দর গ্রাম থেকে উৎসাহী জনতা লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটে আসছে। চল চল ঢাকা চল সুর তুলে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

তিনি জানান, সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য গ্রীণজোনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো মাঠে বসার জন্য ত্রিপল বিছানো হবে। স্টেজে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, দলের শহীদ পরিবারের সদস্য ও জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য, কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদ সদস্যদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে। মঞ্চের ডান ও বাম দিকে তিনশ’ করে চেয়ার আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। সেখানে শহীদ পরিবার,আমন্ত্রিত অতিথি এবং দলের জেলা আমীরগণ আসন গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান। সমাবেশে মেডিকেল বুথ বানানো হয়েছে। দর্শকদের দেখার সুবিধার্থে ৩৩টি এলইডি স্কিন দেওয়া হয়। থাকবে লাইভ ব্রডকাস্ট করার সমস্ত আয়োজন। জনবল এবং ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ৮টি দলে ভাগ হয়ে কাজ করবেন সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য।

অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের ৭ দফা রয়েছে। এর বাইরে জনগণের আরও দফা বাড়ছে দিনদিন। তিনি সমাবেশ সফল করার জন্য রাজধানীবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ঢাকাতে লাখ লাখ মানুষ প্রবেশ করবে; তাতে যানজটসহ কিছু জনদুর্ভোগ হবে। দেশের ও জনগণের স্বার্থে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানান।

দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে মাঠ পরিদর্শনে যান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ সাহাবুদ্দিন ও মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মাদ দেলাওয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

উদ্যান পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, আল-হামদুলিল্লাহ, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ‘জাতীয় সমাবেশ’ অনুষ্ঠানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আল্লাহ তায়ালার নিকট কায়মনোবাক্যে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদের জাতীয় সমাবেশ যথাযথভাবে সফল করার তাওফিক দান করেন। আপনারাও দোয়া করবেন এবং দেশবাসীর কাছেও দোয়া চাই।

তিনি আরও বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আপনাদের মাধ্যমেই আমাদের মহাসমাবেশের খবর শুধু জাতির কাছে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও পৌঁছে যাবে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। আপনারা অতীতেও আমাদের সহযোগিতা করেছেন, আপনারা সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন ইনশাআল্লাহ।