ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে গত মঙ্গলবার মিরপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। একই সাথে নিহতদের পরিবার ও আহতের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর অগ্নিকা-ে বহুসংখ্যক মানুষ মারা যায়। অগ্নিকা-ের পরে একধরনের তোড়জোর শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তা স্তিমিত হয়ে যায়। অগ্নিপ্রতিরোধী বিদ্যমান আইনগুলোর কোন বাস্তবায়ন হয় না, নজরদারী হয় না। আবার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক আইন অনুসরণ করাও সম্ভব হয় না। সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে নিরিহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেই চলছে। একটি সভ্য দেশে এই পরিস্থিতি সহ্য করার মতো না। তাই অবিলম্বে অগ্নিনিরাপত্তাসহ জননিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনগুলো পর্যালোচনা করতে হবে এবং সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

পীর সাহেব চরমোনাই দাবি জানিয়ে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান কোনভাবেই কাম্য নয়: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, চরমোনাই পীর গতকাল বিবৃতিতে বলেছেন, শিক্ষক আমাদের সমাজ নির্মাণের কারিগর। তাদের সম্মান ও মর্যাদার ওপরে রাষ্ট্রের আগামীর ভবিষ্যত নির্ভর করে। শিক্ষকদের আর্থিক নিশ্চয়তা ও সাবলম্বিতা শিক্ষাখাতে মেধাবীদের আকর্ষণ করবে। তাই এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে সম্মান-শ্রদ্ধার সাথে আলোচনার টেবিলে সমাধান করতে হবে।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, একজন শিক্ষকের আবাসনভাতা, উৎসবভাতা ও চিকিৎসাভাতা হিসেবে যা দেয়া হয় তা ভাবাও যায় না। ফলে তারা যে দাবি করছে তা যৌক্তিক। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বারংবার শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলে আসছে। শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ হয় তার বেশিরভাগই যায় অবকাঠামো ও প্রশাসনিক খাতে। মূলত যারা পাঠদানের কাজ করছেন তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে খুবই কম। ফলে শিক্ষাখাতে মেধাবীরা আগ্রহী হচ্ছে না। যারাও এই খাতে আসছেন তারাও আর্থিক টানাপোড়েন এবং অন্যান্য খাতের সাথে তুলনামূলক খারাপ অবস্থায় থাকার কারণে অনেকেই পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এমন বাস্তবতায় শিক্ষকদের বর্তমান দাবিকে দ্রুততার সাথে মেনে নিতে হবে এবং সার্বিকভাবে শিক্ষাখাতে এমনভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে যাতে শিক্ষকগণ সরাসরি উপকৃত হন।

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে তাদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোন অবস্থাতেই শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যায় না। একই সাথে সন্মানিত শিক্ষকদের প্রতি আহবান করবো, সরকারের সংগতির প্রতি লক্ষ রেখে সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে যাতে করে কোনভাবেই পতিত ফ্যাসিবাদ কোন সুযোগ নিতে না পারে।

জেলায় জেলায় মানববন্ধন: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় ধাপের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার দেশের সকল জেলা শহরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিন্মোক্ত ৫ দফা দাবিতে এর আগেও দুই দফায় ঢাকা, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও থানায় থানায় কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তৃতীয় দফার কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানবন্ধন করেছে ইসলামী আন্দোলন। গতকাল জেলায় জেলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দাবি সমূহ হলো,

(১) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে গণভোট প্রদান করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা।

(২) আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট প্রদান করা।

(৩) অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

(৪) ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।

(৫) স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

মানববন্ধনে বক্তাগণ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, তফসিলের আগে গণভোট না হলে আগামী নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।