# ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
# খুলেছে ৭ আবাসিক হল
# ভিসির পদত্যাগ দাবিতে খুলনার জিরোপয়েন্টে ব্লকেড
# চাপ দিয়ে’ উপাচার্যকে অপসারণ করলে মানবে না শিক্ষক সমিতি
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরারের সঙ্গে আলোচনার পরও আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি আন্দোলনরত কুয়েট শিক্ষার্থীরা। এদিকে দুপুরে সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে একই সাথে খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ আবাসিক হল। অপরদিকে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে খুলনার জিরোপয়েন্ট ব্লকেড করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদকে ‘চাপ দিয়ে’ অপসারণ করা হলে তা মেনে নেবে না কুয়েট শিক্ষক সমিতি। কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা না বলায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা।
সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আশরাফুল গণি ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এতে আমরা ব্যথিত হয়েছি। অল্প কয়েকজন মিছিল করলে সাংবাদিকরা নিউজ করেছে যে কুয়েট উত্তাল, অথচ কুয়েটে শিক্ষার্থী ৫ হাজারেরও বেশি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রাজনৈতিক ট্যাগ দিচ্ছে, যা দুঃখজনক। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর করেছে, গায়ে থুতুও দিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন, তাদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। তিনি এসবের বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে কুয়েট এ সংগঠিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দিন শিক্ষার্থীদের হাতে কতিপয় কর্মচারীকে লাঞ্ছিতকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কুয়েট কর্মচারী সমিতি উদ্যোগে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তৃতা করেন কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ আলী সাবেক সভাপতি মো. ইমদাদ মোড়ল, মো. আতাউর মোড়ল, আশরাফুল কাজী, সম্রাট কাজী, মো. হাফিজুর রহমান প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, কুয়েট প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংগঠিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দিন যে সকল শিক্ষার্থীদের হাতে আমাদের কতিপয় কর্মচারী লাঞ্ছিত হয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া বক্তারা ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে আপনারা আলোচনায় বসুন।
এদিকে কুয়েটে ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে একই সাথে খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ আবাসিক হল। দুপুরে সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভূঞা সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০১তম (জরুরী সভার সিদ্ধান্তে মোতাবেক আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা এবং ২ মে আবাসিক হলসমূহ খোলার বিষয়ে বলা হয়। বুধবার (২৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০২তম (জরুরী) সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ২ মে এর পরিবর্তে বুধবার বিকেলে খোলা হয়।
এদিকে, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরারের সঙ্গে আলোচনার পরও আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি আন্দোলনরত কুয়েট শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল পৌণে ১০টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কুয়েটে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভঙ্গ করে আইনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি এ সময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তিন সদস্যের কমিটি এসে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে খুলনার জিরোপয়েন্ট খুবি শিক্ষার্থীদের ব্লকেড : কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে খুলনার জিরোপয়েন্টে ব্লকেড করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে খুবি শিক্ষার্থী। বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ৩ টায় ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে তারা জিরো পয়েন্ট মোড় অবরোধ করেন। এ সময় খুলনা-সাতক্ষীরা ও খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের অনুরোধ ও তীব্র গরমে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে সড়কের একপাশে সমাবেশ করেন। এসময় বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা স্লোগানে বলেন, দফা এক দাবি এক মাসুদের পদত্যাগ, এক-দুই-তিন-চার মাসুদ তুই গদি ছাড়, তুমি কে আমি কে কুয়েটিয়ান কুয়েটিয়ান। এর আগে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির সমর্থনে বুধবার সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করেন খুবি শিক্ষার্থীরা। ফলে খুবির অধিকাংশ বিভাগে কোনো ক্লাস হয়নি। এছাড়া কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে দুপুর ১২টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা সচেতন নাগরিক সমাজ, রেড জুলাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন এ কর্মসূচির আয়োজন করে।