অর্থনীতি
ঢাকায় ২দিন ব্যাপী যাকাত ফেয়ার শুরু
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর দেশের জনগণের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন, দারিদ্র্য মুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাকাত’এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও লিংক রোডস্থ আলোকি কমিউনিটি সেন্টারে শুরু হয়েছে ত্রয়োদশ যাকাত ফেয়ার ২০২৫। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন শনিবার সকাল ১১ টায় ফেয়ার উদ্বোধন করেছেন।
সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) আয়োজিত এ ফেয়ারের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংগঠিত ও পরিকল্পিত উপায়ে যাকাত প্রদান, যাকাত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এবং দারিদ্য বিমোচন সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞতা বিনিময়।
“ Role of Islamic Social Finance in Economic Empowerment and Human Development” শীর্ষক উদ্বোধনী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে আর্থিক বৈষম্য এখনও প্রকট। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। দেশে প্রায় ১৩% মানুষ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যান। UNDP -এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্েযর মধ্যে বাস করছেন। ইসলামিক সোশ্যাল ফাইন্যান্সের মাধ্যমে আমরা একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি যেখানে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী ধাপে ধাপে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে, যা টেকসই উন্নয়নের একটি সমন্বিত মডেল, যা নতুন বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর দেশের জনগণের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন, দারিদ্র্য মুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে এক লক্ষ কোটি টাকার যাকাত হয়। কিন্তু কল্পনা করুন, যদি এক লক্ষ কোটি টাকা যাকাত সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে বাংলাদেশে কেউ অভুক্ত থাকতোনা। যাকাত হচ্ছে একটি আন্দোলন, যা দিয়ে দেশ থেকে পুরোপুরি দারিদ্র দূরীকরণ সম্ভব, আর এটি করতে গেলে দরকার সিজেডএম এর মতো আরো অনেক প্রতিষ্ঠান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির এসাসিয়েট প্রফেসর ড. ইমরানুল হক। তিনি ইন্টিগ্রেটেড সার্কুলার ফ্লো মডেল উপস্থাপন করেন, যেখানে যাকাত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাথমিক এবং জরুরি সহায়তা, ওয়াক্ফ দ্বারা অবকাঠামোগত দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন, সাদাকাহ দ্বারা বিভিন্ন কমিউনিটি প্রজেক্টস বাস্তবায়ন, কর্জে হাসানা দ্বারা উদ্যোক্তাদের সুদবিহীন ঋণ, তাকাফুলের মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করা হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে গেষ্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড যাকাত এন্ড ওয়াকফ ফোরামের সেক্রেটারী জেনারেল দাতুক প্রফেসর গাজালী মেহাম্মদ নূর এবং সিজেডএম উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী লে. জে. (অব:) এম নুরুদ্দীন খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, এনবিআর এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের শরিয়াহ সুপারভাইজারী বোর্ডের সদস্য প্রফেসর মোখতার আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। তিনি সিজেডএম-এর মতো প্রাতিষ্ঠানিক যাকাত ব্যবস্থাপনায় ১০০০ কোটি টাকার যাকাত বণ্টনের একটি রূপকল্প উপস্থাপন করেন যার মাধ্যমে ৫৩ লক্ষ মানুষের মৌলিক চাহিদা - খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।
যাকাত ফেয়ারে থাকছে বিভিন্ন যাকাত ও দাতব্য সংস্থা, ইসলামিক সোশাল ফাইনান্স ও বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে যাকাতের সঠিক হিসাব নিরূপণ ও যাকাত সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য কন্সালটেশন ডেস্ক। সর্বস্তরের জনগণ বিশেষ করে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীরা এ ফেয়ারে অংশগ্রহণ করছেন। আগামী রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা পর্যন্ত ফেয়ার চলবে।
এবারের যাকাত ফেয়ারে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রহিমআফরোজ, খাদিম সিরামিকস, কোহিনুর কেমিক্যাল, রহিম ষ্টিল, সাউথ ব্রিজ, হজ্ব ফাইনান্স কোম্পানি, আইডিএলসি ইসলামিক, এসএমসিসহ দেশের সনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফেয়ারে বিভিন্ন আর্থিক ও যাকাত প্রতিষ্ঠানের স্টলসহ যাকাত কনসালটেশন ডেস্ক ও বিভিন্ন ইসলামিক বইয়ের স্টল থাকবে।