গলদা চিংড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলা। এখানকার চিংড়ি সরাসরি আমেরিকায় রফতানি হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশে রফতনি হচ্ছে গলদা চিংড়ি। বিশ্ববাজারে রফতানি আরো প্রসারিত করতে ডুমুরিয়ায় চাষি, আড়তদার ও হ্যাচারি মালিকদের ১৫ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।

জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডুমুরিয়া উপজেলায় মোট মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে গলদা ৭ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন, বাগদা ২ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৮৪২ মেট্রিক টন। এছাড়া কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে ২৮৪ মেট্রিক টন। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে মোট ২৬ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয় গলদা-বাগদা চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ। ২৫ হাজার গলদা চাষি রয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিস চাষিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। গলদা চিংড়ি বিশ্ববাজারে রফতানি আরো প্রসারিত করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি ধাপে ১৫ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে ডুমুরিয়ার চিংড়ি চাষি, হ্যাচারি মালিক এবং মৎস্য আড়তদারদের। তবে গলদার ভালো রেনু পোনার অভাবে এ বছর চাষিরা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গলদার বাজার ভালো পাওয়ায় ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে উঠেছে বলে তারা জানিয়েছেন। গলদা চিংড়ি বিশ্বে যেমন সুস্বাদু হিসেবে পূর্ব পরিচিতি রয়েছে, তেমনি ধীরে ধীরে দেশের বাজারে গলদার ক্রেতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে গলদার বাজার খুব বেশি কমার সম্ভাবনা নেই।

গুটুদিয়া গ্রামের গলদা চাষি শ্মশান মন্ডল জানান, “গত ২/৩ বছর যাবৎ ডুমুরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় বিলগুলো বর্ষা মওসুমে পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ছে। ফলে আশানুরূপভাবে মাছ চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। তারপরও যে মাছ পাওয়া গেছে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অনেকটা লাভ হবে।”

ডুমুরিয়া মাছের আড়তে দুপুরের বাজারে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে কেনা-বেচা হচ্ছে গলদা চিংড়ি। উপজেলায় মোট আড়ত রয়েছে ১০টি। প্রত্যেক আড়তে জমজম করছে গলদা চিংড়ি। গত বৃহস্পতিবার ডুমুরিয়া মাছের আড়তে ২০/৩৫ পিসে কেজির গলদা ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা, ১৫/২০ পিসে কেজি ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা, ১০/১২ পিসে কেজি ১৪০০ থেকে ১৫৫০ টাকা এবং ৪/৫ পিসে কেজি ২০০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাছের খাদ্য ব্যবসায়ী ইলিয়াস বাগাতি জানান, “এ বছর মাছের খাবারের দাম অনেকটা কম। তাছাড়া গলদা চাষের উপযোগী আবহাওয়া গেছে এবছর। ফলে মাছের গ্রোথ সঠিক হয়েছে। গলদা ধরার ভরা মওসুম চলছে এখন। তাই দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। তবে চাষীরা লাভবান হয়েছে।”

ডুমুরিয়া ডিপো মালিক সমিতির সভাপতি তৈয়েবুর রহমান ও সেক্রেটারি কাজী নাহিদ হোসেন জানান, “ডুমুরিয়া, চুকনগর ও খর্ণিয়া বাজার এলাকায় নিবন্ধনকৃত মাছের ডিপো রয়েছে ১৫টি। এসব বাজারে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে গলদা বিক্রি হচ্ছে। গলদা চিংড়ি এখন দেশের বাজারে রমরমা চাহিদা রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের গলদা চিংড়ি। তারা বলেছেন, দেশে এবং বিদেশের বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি ক্রমান্বয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগান জানান, “গলদা-বাগদা চিংড়ি বিশ্বের ৫০টি দেশে বিক্রি হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলায় গলদা চিংড়ি চাষে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এখানে শতকে গলদা ৮ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। এই উপজেলার মাছ সরাসরি আমেরিকায় রফতানিতে প্রক্রিয়াধীন। আমেরিকা ইতোমধ্যে ঘেরের নিবন্ধন চেয়েছে। আমরা ৪০টি ঘেরের সম্পূর্ণ তথ্য তাদের কাছে প্রেরণ করেছি। আশাকরি খুব শীঘ্রই ডুমুরিয়ার চিংড়ি সরাসরি আমেরিকায় রফতানি হবে।