পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত সামষ্টিক অর্থনীতির গতি ফেরাতে আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বরাবরের মতো এবারও নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকবে এই বাজেটে। একইসাথে থাকবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংমিশ্রণ। লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এই বাজেট স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ না থাকায় আগামী অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। সোমবার বিকেল ৩টায় জাতির উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য তুলে ধরবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে প্রাধান্য দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যার ফলে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার কমেছে। আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয়সহ সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অর্থবছরের মাঝপথে কাটছাঁট করলে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টস অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। গতকাল সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানিয়েছে তথ্য অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, আগামীকাল সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা সমাপ্তির পরপরই এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টস অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। এছাড়া ঢাকায় তথ্য অধিদপ্তর থেকে সচিবালয়ে প্রবেশে অনুমতিপ্রাপ্ত গণমাধ্যম কর্মীরা বাজেট ডকুমেন্টস ও বাজেট বক্তৃতার কপি সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেছেন, এবারের বাজেট দর্শন হলো একটা সমতাভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো একটা বাস্তবভিত্তিক বাজেট করা। সীমিত সম্পদ নিয়ে উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়ন করব না। বড় কোনো প্রকল্প নেয়া হবে না। মানুষের প্রত্যাশা বাড়াতে চাই না। এবারের বাজেট দর্শন হলো একটা সমতাভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলা। এতদিন আমরা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কথা বলে এসেছি, কিন্তু এ প্রবৃদ্ধির সুফল জনগণ ন্যায্যভাবে পায়নি। কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হওয়ার পথে আমরা এগোতে পারিনি। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দিতে চাই। তরুণ ও যুবকদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা মনোযোগ দিতে চাচ্ছি, উন্নয়নশীল দেশে যা খুবই প্রয়োজন। এসব প্রেক্ষিত মাথায় রেখে নিজস্ব সম্পদ এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রতিবছর বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ককর বাড়িয়ে থাকে। এতে বাজারে সেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে পারেন। এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে। এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এডিপির আকার ধরা হতে পারে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটের ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে। পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার আশার কথা বলতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা।
এর আগে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার। ওইদিন বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য।
সংসদ না থাকায় আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না এবারের বাজেটে। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের : নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার প্রায় সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এমন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যখন জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে জনজীবন প্রায় অতিষ্ঠ। যদিও এটি আওয়ামী সরকারের ধারাবাহিকতার অংশ। গত কয়েকমাসে অনেক জিনিসের দামই কমেছে। মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে প্রতিদিনই হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষ নিত্য ব্যবহার করে এমন সব জিনিসপত্রে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হলে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়ও বাড়বে।
এবারের বাজেটে দাম বাড়তে পারে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাতির। এই বাতি তৈরির উপকরণে বসানো হয়েছে ১০ শতাংশ বাড়তি কাস্টমস শুল্ক। খেলনা আমদানিতে এখন ন্যূনতম মূল্য হিসাবে প্রতি কেজিতে ০.৫০ ডলার বাড়ানো হয়েছে। মশা-মাছি-তেলাপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে হলেও গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা। কীটপতঙ্গ মারার উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বড় আঘাত আসছে নির্মাণ উপকরণে। এই খাতের বেশ কিছু দরকারি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে। যেমন সিমেন্ট, রড, বার, অ্যাঙ্গল, টাইলস, স্ক্রু, নাট, বোল্ট ও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেশ বাড়তে পারে।সিমেন্ট তৈরির মূল উপকরণে কাস্টমস শুল্ক ধরা হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। রড, বার ও অ্যাঙ্গল তৈরির কাঁচামালের ওপর বসানো হয়েছে বাড়তি শুল্কের বোঝা। এসব পণ্যে মোট করভার ৩৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯.৩২ শতাংশ করা হয়েছে। টাইলস ও নির্মাণসামগ্রীর মূল উপকরণ মার্বেল ও গ্রানাইট বোল্টারের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে এর মোট করভার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১২৭.৭২ শতাংশ। জিপসাম বোর্ড ও শিট আমদানিতে দ্বিগুণ করা হয়েছে সম্পূরক শুল্ক। এখন শুল্কহার হবে ২০ শতাংশ। ঢাকা শহরের অন্যতম বিরক্তিকর পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তামাকবীজে আগে শূন্য শতাংশ কাস্টমস শুল্ক থাকলেও এখন তা ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সয়াবিন মিলের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। উড়োজাহাজের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ১ শতাংশ এবং হেলিকপ্টারে মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হচ্ছে। বিলাসপণ্যে শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, লিপস্টিক ও ফেসওয়াশের ন্যূনতম শুল্ক মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি কেজি ৪০ ডলার করা হচ্ছে। চকোলেটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের : বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকছে। চিনির প্রতি মেট্রিক টনে শুল্কায়ন মূল্য ৫০০ টাকা কমতে পারে। কমতে পারে বাটার, লবণ, কম ফ্যাটযুক্ত সয়াবিন তেল, বিদেশি জুস, জ্বালানি তেল, ইনসুলিন ও এর প্যাকিং উপকরণ, পশুখাদ্যের দাম। এ ছাড়া চুনাপাথর, দেশীয় কাগজ, কালি, শিরিশকাগজ, নিউজপ্রিন্ট, ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস, ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাস, ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড ও ক্রাউফট লাইনার পেপার, পরিবেশবান্ধব ফ্রুট ব্যাগ, ব্রেক প্যাড ও ক্রিকেট ব্যাটের শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর পরিকল্পনা সরকারের। তবে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকলেও বাস্তবে এসবের দাম খুব একটা কমতে দেখা যায় না। পিভিসি পাইপ, কপার ওয়্যার, মোটরশিল্প, ব্যাটারিশিল্প, লিফটম, এলইডি বাতি, রাইস ব্র্যান ওয়েল, টায়ার-টিউব দেশে উৎপাদন করা হয়। পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। এবার উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একই পদক্ষেপ কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেমিক্যাল পণ্য আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বন্ডের অপব্যবহারও কমবে।
বিভিন্ন সফটওয়্যার আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিদেশি সফটওয়্যারের সঙ্গে দেশি সফটওয়্যারের অসম প্রতিযোগিতা হবে। ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে কদর আছে জাপানিজ স্ক্যালোপের। তাই রপ্তানির সম্ভাবনা থাকায় জাপানিজ স্ক্যালোপ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। জাপান, ইউরোপ ও আমেরিকায় চাহিদাসম্পন্ন জাপানিজ স্ক্যালোপ আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে, যাতে রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়।
সূত্র মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর রাজস্ব আদায়ে কিংবা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রভাব রাখে না। তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই উৎসে করের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। যা সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর বলা যায়।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কাঠার পরিবর্তে শতাংশে নিবন্ধন ফি ও কর নির্ধারণ করা হবে। ভূমি নিবন্ধনে অগ্রিম কর কিছুটা কমানো হতে পারে। এর ফলে ভূমি বা সম্পত্তি নিবন্ধনে কর কমবে না বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
গুরুত্ব দেয়া বিষয় : দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন জাতীয় বাজেট ১০টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রাজস্ব বাজেটের ৫৭ শতাংশ বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। শুধু ভাতা ও বেতন বাবদ ৮২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা চালু হতে পারে। এটি সরকারের খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজস্ব বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ থাকবে। সরকারের ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় পাবে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট খরচের প্রায় ৩৮ শতাংশ। এ খরচের সবচেয়ে বড় বরাদ্দ যাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে। এর আগে তালিকার শীর্ষে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগে এ বছর বরাদ্দ কমবে। প্রতিরক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, বিদ্যুৎ এবং সামাজিক কল্যাণে বরাদ্দ সামান্য কমতে পারে। স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জননিরাপত্তায় বরাদ্দ সামান্য বাড়তে পারে। কৃষি ও সড়ক পরিবহনে বরাদ্দ আগের মতো থাকার সম্ভাবনা আছে। বাজেটে প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে ভ্যাট নিবন্ধনের নিয়ম কঠোর করা। করের পরিধি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগে এই সীমা ছিল তিন কোটি টাকা।