জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের আগামীকাল সোমবার ঘোষিত হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। সংসদ না থাকায় বাজেট ঘোষণা এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য তুলে ধরবেন।
এবার ভিন্ন এক পেক্ষাপটে এসেছে বাজেট। সম্ভাব্য আকার সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এবার ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। যা জিডিপি’র ৪ শতাংশের কিছুটা বেশি। উন্নয়ন ব্যয় অর্থাৎ এডিপি চূড়ান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে কম। সাধারণ মানুষদের জন্য বাজেটে কী বার্তা দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ? এমন প্রশ্নের জবাবের অপেক্ষায় সবাই। যদিও অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের কথা মাথায় রেখেই এবারের বাজেট ঘোষণা করা হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যাচাই বাছাই করে অপচয়মূলক বাজেট কমিয়ে অন্য খাতে বাড়ানো উচিত। এই ব্যবস্থাপনার উন্নতি অবশ্যই করা উচিত। ভর্তুকি এবং প্রণোদনা খাতে সম্ভাব্য বরাদ্দ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। বা অভ্যন্তরীণ আয়েই নির্ভর হতে চায় সরকার। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় কীভাবে আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যে টাকা করদাতা দিয়েছে কিন্তু রাজস্ব কোষাগারে জমা হয়নি, সেটা জমা করা গেলে সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা কমবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের অবস্থা খুবই দুর্বল, এটা থেকে বের হওয়া কঠিন হবে যদি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা না কাটে। এছাড়া আমাদের রাজনৈতিক ও পলিসির অনিশ্চয়তা আছে।
সূত্র মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চলতি বাজেটের চেয়েও ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে গ্রামীণ পর্যায়ে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে।
সূত্র মতে, সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার। বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য। তারপর আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হত সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হত নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের নিকট মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের : নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার প্রায় সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এমন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যখন জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে জনজীবন প্রায় অতিষ্ঠ। যদিও এটি আওয়ামী সরকারের ধারাবাহিকতার অংশ। গত কয়েকমাসে অনেক জিনিসের দামই কমেছে। মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে প্রতিদিনই হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষ নিত্য ব্যবহার করে এমন সব জিনিসপত্রে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হলে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়ও বাড়বে।
এবারের বাজেটে দাম বাড়তে পারে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাতির। এই বাতি তৈরির উপকরণে বসানো হয়েছে ১০ শতাংশ বাড়তি কাস্টমস শুল্ক। খেলনা আমদানিতে এখন ন্যূনতম মূল্য হিসাবে প্রতি কেজিতে ০.৫০ ডলার বাড়ানো হয়েছে। মশা-মাছি-তেলাপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে হলেও গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা। কীটপতঙ্গ মারার উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বড় আঘাত আসছে নির্মাণ উপকরণে। এই খাতের বেশ কিছু দরকারি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে। যেমন সিমেন্ট, রড, বার, অ্যাঙ্গল, টাইলস, স্ক্রু, নাট, বোল্ট ও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেশ বাড়তে পারে। সিমেন্ট তৈরির মূল উপকরণে কাস্টমস শুল্ক ধরা হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। রড, বার ও অ্যাঙ্গল তৈরির কাঁচামালের ওপর বসানো হয়েছে বাড়তি শুল্কের বোঝা। এসব পণ্যে মোট করভার ৩৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯.৩২ শতাংশ করা হয়েছে। টাইলস ও নির্মাণসামগ্রীর মূল উপকরণ মার্বেল ও গ্রানাইট বোল্টারের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে এর মোট করভার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১২৭.৭২ শতাংশ। জিপসাম বোর্ড ও শিট আমদানিতে দ্বিগুণ করা হয়েছে সম্পূরক শুল্ক। এখন শুল্কহার হবে ২০ শতাংশ। ঢাকা শহরের অন্যতম বিরক্তিকর পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তামাকবীজে আগে শূন্য শতাংশ কাস্টমস শুল্ক থাকলেও এখন তা ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সয়াবিন মিলের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। উড়োজাহাজের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ১ শতাংশ এবং হেলিকপ্টারে মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হচ্ছে। বিলাসপণ্যে শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, লিপস্টিক ও ফেসওয়াশের ন্যূনতম শুল্ক মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি কেজি ৪০ ডলার করা হচ্ছে। চকোলেটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের : বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকছে। চিনির প্রতি মেট্রিক টনে শুল্কায়ন মূল্য ৫০০ টাকা কমতে পারে। কমতে পারে বাটার, লবণ, কম ফ্যাটযুক্ত সয়াবিন তেল, বিদেশী জুস, জ্বালানি তেল, ইনসুলিন ও এর প্যাকিং উপকরণ, পশুখাদ্যের দাম। এ ছাড়া চুনাপাথর, দেশীয় কাগজ, কালি, শিরিশকাগজ, নিউজপ্রিন্ট, ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস, ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাস, ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড ও ক্রাউফট লাইনার পেপার, পরিবেশবান্ধব ফ্রুট ব্যাগ, ব্রেক প্যাড ও ক্রিকেট ব্যাটের শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর পরিকল্পনা সরকারের। তবে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকলেও বাস্তবে এসবের দাম খুব একটা কমতে দেখা যায় না। পিভিসি পাইপ, কপার ওয়্যার, মোটরশিল্প, ব্যাটারিশিল্প, লিফটম, এলইডি বাতি, রাইস ব্র্যান ওয়েল, টায়ার-টিউব দেশে উৎপাদন করা হয়। পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। এবার উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একই পদক্ষেপ কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেমিক্যাল পণ্য আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বন্ডের অপব্যবহারও কমবে।
বিভিন্ন সফটওয়্যার আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিদেশী সফটওয়্যারের সঙ্গে দেশী সফটওয়্যারের অসম প্রতিযোগিতা হবে। ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে কদর আছে জাপানিজ স্ক্যালোপের। তাই রপ্তানির সম্ভাবনা থাকায় জাপানিজ স্ক্যালোপ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। জাপান, ইউরোপ ও আমেরিকায় চাহিদাসম্পন্ন জাপানিজ স্ক্যালোপ আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে, যাতে রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়।
যেসব পরিবর্তন আসছে : আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাপক শুল্ক ও কর সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ ও রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, নতুন বাজেটে ৬২২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস এবং ১০০টি পণ্যে কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। উপকৃত পণ্যের তালিকায় রয়েছে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি, পেপার পণ্য, বাস, নিউজপ্রিন্ট, ক্যান্সার চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল। এছাড়া তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাবও থাকছে। আমদানি ঘোষণায় ভুল থাকলে বর্তমানে ৪০০ শতাংশ শাস্তির পরিবর্তে তা কমিয়ে ২০০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও সহনশীল হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এনবিআর ১০০টি পণ্যে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব আনছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল খাতের কাঁচামাল, শিল্প যন্ত্রপাতি এবং সামরিক সরঞ্জাম। ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত ৭৯টি নতুন কাঁচামালকে শুল্কমুক্ত তালিকায় আনা হচ্ছে। এতে দেশে চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস এবং স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কৃষিপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতির (বিশেষ করে কম্প্রেসর) ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার যানজট নিরসনে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। মাইক্রোবাসে (১০-১৫ আসন) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশীয় সফটওয়্যার রফতানিতে উৎসাহ দিতে সফটওয়্যার উন্নয়ন সরঞ্জাম, অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেস এবং সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে।
রাজস্ব আয় বাড়াতে আসন্ন বাজেটে আয়কর কাঠামোয় একাধিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য পুনরায় ৩০ শতাংশ করহার চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আয়ের বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন করহার নির্ধারণ করে ধাপে বাড়তে থাকা হারে (গ্র্যাজুয়েটেড) কর কাঠামো চালুর চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের করদাতাদের তুলনায় উচ্চ আয়ের করদাতাদের ওপর করের চাপ বেশি পড়বে।
কী বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা : আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে।
অর্থনীতিক স্থিতিশীলতাই লক্ষ্য : জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি বেগবান করতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার, পদক্ষেপ ও কর্মকা-ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সার্বিকভাবে আর্থসামাজিকভাবে বৈষম্য কমানোর যে তাড়না থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল, তা পূরণের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে।
অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রধান কে এ এস মুরশিদ বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে টাস্কফোর্সের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ থাকবে বলে আমরা আশা করতে পারি। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করতে হবে।
বাজেটে নতুন কি থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, এই যে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ হয়েছে, তার প্রয়োগ ঘটাতে আগামী বাজেটে বিশেষ তহবিল করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে নেমেছে। এটিকে আস্থায় আনতে বাজেটে বিশেষ ব্যভস্থা থাকবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকতে পারে নতুন বাজেটে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মতো আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। তারপরও আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ। চলতি র্অবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে এরইমধ্যে ৫.২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।