মোঃ রফিকুল ইসলাম, কালিগঞ্জ, (সাতক্ষীরা) : পানির ফল বলতে পানি সিংড়াকে বুঝায়। পানিফল বা পানি সিংড়ার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, দেবহাটা এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে। কম খরচে এই ফল চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারার সুযোগ থাকায় এই ফল চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। প্রতিবছর যে পরিমাণ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার চেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে। দেখতে কিছুটা ভাজা সিংড়ার মতো যা হোটেল রেস্তারাঁয় আর বিভিন্ন ভাজার দোকানে পাওয়া যায়।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যায়, গতবছর পানিফল চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ থেকে ২২ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ হেক্টর জমিতে। বিগত বছরের তুলনায় জেলার সব উপজেলার পাশাপাশি দেবহাটা উপজেলার সখিপুর, গাজিরহাট, আস্কারপুর, কামটা, কোঁড়া, দেবহাটা, পারুলিয়া, কুলিয়া, বহেরা আর কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া, নলতা, কাজলা, মাটিকোমরা, বেজোরআটি, ভাড়াশিমলা, চম্পাফুল, দক্ষিণ শ্রীপুর, সোনাতলা সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সিংড়ার চাষ করা হয়েছে।
এ চাষ ফসল চাষের জমি, ডোবা, খানা, মৎস্য ঘেরে সুবিধাজনক। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে চাষ করার সুযোগ থাকায় দিনে দিনে চাষের পরিধি বেড়ে চলেছে। তাছাড়া পানিফলের গাছ দেখতে কচুড়িপানার মত পানির উপরে ভেসে থাকে, পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মত ডগা বের হয়ে বংশ বিস্তার করে এবং তা থেকে ফল ধারণ করে। পানিফল চাষে খুব বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না, সার ও কীটনাশকের পরিমাণ কম লাগে।
কালিগঞ্জ উপজেলার পানিফল চাষি হায়দার আলী কারিকর বলেন, ‘গতবছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করছিলাম। এ বছর সাড়ে ৩ বিঘার জমিতে পানিফল চাষ করছি। ভালো ফলন হলে আগামীতে আরো দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে এ চাষ করবো।’ এমন আশা করছি আমি। দেবহাটা উপজেলার আস্কাপুর গ্রামের সিংড়া চাষি মোঃ ইউনুছ গাজী বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে আমি শিংড়ার চাষ করছি জমি লিজ নিয়ে। প্রথমে আমি ২/৩ বিঘা শিংড়ার চাষ করতে করতে বর্তমানে আমি ৩৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পানি শিংড়ার চাষ করছি। গত বছর আমি খরচ বাদে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা লাভ করে ছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ইনশাল্লাহ এবার কম হবে না। পানিফল বা পানি সিংড়ার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুধু সাতক্ষীরায় নয় ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কম খরচে এই ফল চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারার সুযোগ থাকায় এই ফল চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। প্রতিবছর যে পরিমাণ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার চেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে।
এলাকার শিংড়া চাষিরা আরও বলেন, ‘পানিফল মৌসুমি ও অঞ্চলভিত্তিক হওয়ায় আমরা সঠিক মূল্য ও বাজার তৈরি করতে পারিনি। আমরা মনে করি, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মৌসুমি ফল বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যাপক চাষের পাশপাশি মার্কেট তৈরি হবে।’
দেবহাটা উপজেলার কামটা গ্রামের পানিফল ব্যবসায়ী খোকন সরদার এ প্রতিবেদককে জানান, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি অর্ধশতাধিক চাষিদের মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পরে বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল ক্রয় করেন। এভাবে ৭ থেকে ৮ বছর তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজারে ৪০০-৬০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে বর্তমানে খুবই কম দরে পানিফল পাওয়া যাচ্ছে।