মো. ফিরোজ আহমেদ, পাইকগাছা : উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করা যেতে পারে। এই ফলের বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব হলে তা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। বর্তমানে বাজারের কেওড়া ফলের চাহিদা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে এর চাষ ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়ানো যেতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।

সুন্দরবন অঞ্চলের সবচেয়ে সৌন্দর্য্যমন্ডিত গাছ কেওড়া। লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। সারি সারি সবুজে ভরা কেওড়া গাছ দেখলে সবারই নজর কাড়বে। সুন্দরবন ঘেষা নদ-নদী, খালের চরগুলোতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ জন্মে। এ গাছের সঙ্গে কম বেশি সবাই পরিচিত। কেওড়া গাছ পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা করে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের রক্ষাকবচ হিসেবেও কাজ করে।

কেওড়া ফল উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা বয়ে আনতে পারে।

কেওড়া গাছ পরিবেশসহ উপকূলীয় বেষ্টনী মায়ের মতো আগলে রেখেছে। সুন্দরবনের বানর ও হরিণের প্রিয় খাবার এই কেওড়া ফল। বনের হাজার হাজার বানর ও হরিণের প্রাণ বাঁচায়। হরিণ আর বানরের উপাদেয় খাদ্য হলেও বহু বছর আগ থেকে মানুষ ও মাছের খাদ্য হিসাবে পরিচিত। তাই এ গাছটি হয়ে উঠতে পারে লবণাক্ততায় আক্রান্ত কর্দমাক্ত জমির বিশেষ ফসল।

কেওড়া গাছ সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। তা’ছাড়া, উপকূলীয় এলাকায় নদ, নদীর চরে এ ম্যানগ্রোভ গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। এ গাছ উপকূলীয় মাটির ক্ষয় রোধ করে মাটিকে দিবে দৃঢ়তা ও উর্বরতা, রক্ষা এবং লবণাক্ত পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। কেওড়া গাছ উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে রক্ষা করে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে।

সুন্দরবন অঞ্চলের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্দিত গাছ কেওড়া। নতুন জৈব-বর্জ্য সমৃদ্ধ, মোটামুটি বা অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের বিস্তৃত বনাঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। সরল পাতা বিপরীতমুখী, ফুল উভলিঙ্গ। ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। এর পাতা জিওল গাছের পাতার মতো সরু-লম্বাটে। ছোট ছোট হলুদ বর্ণের ফুল হয়। এ ফুলের মধুও সুস্বাদু। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি। কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু টক স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীচি। কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো দেখতে।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কেওড়া ফলের চাষ ও বাণিজ্যিকীকরণ হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্র যোগ হতে পারে। কেওড়া ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। কেওড়া ফলের বাণিজ্যিকীকরণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেওড়া ফল থেকে আচার, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি তৈরি করে বাজারজাত করা যেতে পারে।উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কেওড়া ফলের বাণিজ্যিক ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।