মশিউর রহমান, সাদুল্লাপুর : সাদুল্লাপুরে ইরি-বোরো চাষে খরচ বেড়েছে। ডিজেল, সার, বীজ, চারা, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজের সমারোহ মৃদু বাতাসে দুলছে কিছু দিন পূর্বে লাগানো ধানের চারা। জমিতে ফসল পরিচর্য়ায় ব্যস্ত এলাকার কৃষক। আশা ভালো ফলন পাওয়ার। সেচ মেশিন, ডিজেল, বিদ্যুৎ, সার, কীটনাশক, মজুরির দাম বাড়ায় ইরি বোর মৌসুমে ধান চাষে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। প্রতি বিঘা(৩৩ শতাংশে)খরচ বেড়েছে ৫/৬ হাজার টাকা। সাদুল্লাপুর উপজেলায় আলু চাষে ক্ষতি হওয়ায় বাড়তি লাভের আশায় শশা, কচু,করলা,চাষে ঝুকছে কৃষক। ফলে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ধান উৎপাদন হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ভোক্তাদের উপর পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। অপর দিকে ধান উৎপাদনে গত বছরের তুলনায় খরচ বেশি হওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধায় এ বছর ১ লক্ষ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে সাদুল্লাপুর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার ৬ হেক্টর, ৩০ হেক্টর জমিতে এ বছর অর্জন ১৫ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর হতে পারে গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৬ শত ২০ হেক্টর। উপজেলার ১১ ইউনিয়নের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধান উৎপাদনে জন্য প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে। ইরি বোর ধানে অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়। খরচ কমাতে সেচ পাম্পের মালিকরা জমিতে নিয়মিত সেচ দিচ্ছে না। এতে করে রোগ বালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ রাড়ছে। প্রয়োগ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশক ও বালাই নাশক। অতিরিক্ত দামে কীটনাশক ও বালাই নাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে নকল কীটনাশক বালাই নাশকের রমরমা ব্যবসা ঘুরনি পাকে ঠকছে কৃষক মরছে ফসল। একাধিক কৃষক এমন অভিযোগ করেন। সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দোকোমরপুর ইউনিয়নের ঝাউলা গ্রামের কৃষক লোকমান বলেন, গত বছর এক বিঘা(৩৩ শতাংশ) জমিতে ১২ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়েছে। এ বছর তা বেড়ে ১৮/১৯ হাজার হতে পারে। কারণ গত বছর এক বিঘা (৩৩শতাংশ) জমিতে সেচ বাবদ ভাড়া ছিলো ১ হাজার ২ শত টাকা এ-বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭ শত টাকা। ধান রোপনে জমি চাষ, জৈব রাসায়নিক সার,বালাই নাশক, কীটনাশক,শ্রমিক, খরচ বেশি দিতে হয়েছে। ইদিলপুর ইউনিয়নের কুঞ্জমহিপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন,আমাদের এলাকার কৃষকরা ধানের উপর নির্ভরশীল কিন্তু এ বছর সব খরচ বেড়েছে। ন্যায্য মূল্য না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। মজার বিষয় হলো ফসল উঠার পর সিন্ডিকেট হয়। কৃষকের হাত ছাড়া হলেই বেড়ে যায় দাম। সিন্ডিকেট ভেঙে কৃষককে বাঁচাতে হবে। কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড মোটা ধান খুব ভালো হলে ২৫/২৬ মণ হতে পারে। মৌসুমে বাজারে ধান বিক্রি হয় কাঁচা ৮ শত টাকা। সেই হিসাবে ধানের মূল্য দাঁড়ায় ১৭ হাজার থেক ২০ হাজার ৮ শত টাকা।

মৌসুমে শ্রমিক খরচ বেড়ে গেলে ও ফলন আশানুরূপ না হলে ধান উৎপাদনেও লোকসান গুণতে হবে কৃষককে। উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মাহবুবুল আলম বসুনিয়া বলেন, এবছর বিভিন্ন বিলে পানি কম থাকায় ধান চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে সহজে ফসল ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। বিভিন্ন কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বাজার থেকে কৃষক কীটনাশক ও বালাই নাশক সরকার অনুমোদিত ওষুধ কোম্পানির ক্রয় করবে। কারো পরামর্শে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া আমাদের হট লাইন রয়েছে ইচ্ছে করলে কৃষক সেখানে ফোন করে পরামর্শ নিতে পারে। সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মতিউল আলম বলেন, এ বছর উপজেলায় ইরি বোর মৌসুমে ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে না পাড়লে আগামীতে ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে কৃষক। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করছি।