শাহজাহান তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : নদীকেন্দ্রিক চলনবিলের পাটের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখানকার পাটবন্দরগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের সলঙ্গা, চান্দাইকোনা, উল্লাপাড়ার ঝিকড়া বন্দর, চাচকৈড় হাট, তাড়াশের নওগাঁ, মির্জাপুর, হান্ডিয়ালসহ বেশ কিছু পাটবন্দর উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এগুলো ছাড়াও পাবনার চাটমোহরের অমৃত কুন্ডা, মহেলা, কাটাখালী; রায়গঞ্জের পাঙ্গাশী, ঘুরকা; ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজ, নাটোরের সিংড়ার বন্দর, বিয়াস হাটে হরদম চলছে পাট বেচাকেনা।
সরেজমিন তাড়াশের প্রসিদ্ধ নওগাঁ হাটে গিয়ে দেখা গেছেÑক্রেতা, বিক্রেতা, কুলি, শ্রমিকের উপস্থিতিতে হাট সরগরম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নতুন পাটের আমদানি গত বছরের তুলনায় বেশি। দামও গত বছরের চেয়ে প্রকারভেদে মণপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা বেড়েছে।
এ হাটে পাট কিনতে এসেছেন গুরুদাসপুরের মহাজন আব্দুস সালাম। তিনি জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাটে ১৪০০ থেকে ১৫০০ মণ পাট বিক্রি হয়। চলনবিলসংলগ্ন প্রায় সব হাটেই শত শত মণ পাট বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলনবিলে বোরো আবাদের পর পাট আবাদ করা হয়েছে। চলতি বছর এ বিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ অংশে ৮১০ হেক্টর, শাহজাদপুরে ৩৮৭ হেক্টর, নাটোরের গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর, সিংড়ায় ১ হাজার ৭৪০ হেক্টর, পাবনার চাটমোহরে ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টরসহ ৯ উপজেলায় ২২ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ২০২৪ সালে আরও কম জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। ওই বছর সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ৬০১ হেক্টর, শাহজাদপুরে ৩২৭ হেক্টর, নাটোরের গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৩৩৯ হেক্টর, সিংড়ায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টর, পাবনার চাটমোহরে ৮ হাজার ৪৫৬ হেক্টর। চলতি মৌসুমে এর চেয়ে প্রায় ১ হাজার ১৯১ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে।
এক দশক আগেও এ অঞ্চলের কৃষকরা তোষা জাতের পাটের আবাদ করতেন। পাঁচ-ছয় বছর ধরে কেনাফ, মেস্তা, রবি-১সহ কয়েকটি জাতের পাট আবাদ শুরু করেছেন তারা। বিঘায় ৭ থেকে সর্বো”চ ১১-১২ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা জানান, ৭৫ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে পাটের ফলন পাওয়া যায়। পাট প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনীয়। ধান, সরিষা, আলু বা অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনকও বটে। এ কারণে বোরো আবাদের পর পাট রোপণ করেন কৃষকরা।
গুরুদাসপুর কৃষি কর্মকর্তা কে এম রাফিউল ইসলাম জানান, বৃহৎ এলাকা নিয়ে চলনবিল। গুরুদাসপুরে এ বছর পাটের আবাদ গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। ফলনের সঙ্গে ভালো দামও পেয়েছেন কৃষক। মোট কথা, এ অঞ্চলে পাটের সুদিন ফিরেছে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা সেনগুপ্তা জানান, পাটের এ দাম ¯’ায়ী হলে এ অঞ্চলে পাটের হারানো সুদিন ফিরবে।