উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশংকা

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার হাওড়াঞ্চলে বোরো ধান কাটার মৌসুম পুরোদমে শুরু হয়েছে। সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে আধুনিক যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এখন বেশি. কিন্তু সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও মাঠে দেখা মিলছে না কাক্সিক্ষত কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিনের।

কৃষকরা বলছেন, কাগজে-কলমে মেশিন থাকলেও বাস্তবে সেগুলোর দেখা নেই। বাধ্য হয়ে তারা উচ্চ মজুরিতে শ্রমিক নিয়োগ করে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে কৃষকদের ধান কাটার কাজে সহায়তা করতে সরকার ৪৩টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার সরবরাহ করেছে। এসব আধুনিক যন্ত্র প্রতি ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটতে সক্ষম, যা শ্রমঘন ও সময়সাপেক্ষ ধান কাটার বিকল্প হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। তবে হাওড়ের মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, এসব মেশিনের বেশিরভাগই অচল অবস্থায় পড়ে আছে অথবা মাঠে নামানো হয়নি, মাঠে থাকলেও পার্শ্ববর্তী উপজেলায় ধান কাটছে।

একাধিক হাওড় এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, অনেক মেশিন মালিকদের যোগাযোগ নম্বরের সঙ্গে নাম মেলেনি। একই বাড়ির দুই ভাইয়ের নামে দুইটি মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মনীতি পরিপন্থী বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই বরাদ্দপ্রাপ্ত মেশিন ভাড়া না দিয়ে নিজস্ব জমির জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন, ফলে সাধারণ কৃষক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষক আবদুল কাইয়ুম বলেন, “সরকার যে মেশিন দিয়েছে, তার সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। যারা প্রকৃত কৃষক নয়, তারাই মেশিন নিয়ে বসে আছে। আমাদের এখন প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক এনে ধান কাটতে হচ্ছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ মহসিন বলেন, “অচল মেশিনগুলোর বিষয়ে সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি। যন্ত্রাংশের দাম বেশি এবং স্থানীয়ভাবে না পাওয়ায় দ্রুত সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশাবাদী, ধান কাটা পুরোদমে শুরু হলে অধিকাংশ মেশিন মাঠে নামবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে কিছু মেশিন সচল রয়েছে এবং তা দিয়ে ধীরে ধীরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এলাকার চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত হার্ভেস্টার অন্যান্য উপজেলায় কাজ করতে পারবে”

তবে কৃষকদের অভিযোগ, হার্ভেস্টার বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। প্রকৃত কৃষকেরা সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন, যাতে সময়মতো ধান ঘরে তুলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা লোকসানের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।