কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা:সড়কের পাশে বাতাসে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা কদম। কাছে গিয়ে বোঝা গেল এগুলো পেঁয়াজের ফুল। এই ফুলগুলো শুকিয়ে কিছুদিন পর বের হবে কালো বীজ। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা। পাওয়া যায় ভালো দামও। এই ক্ষেতের মালিক কৃষক আবু তালেব। তিনটি প্লটে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন তিনি। নানা বয়সী শ্রমিক পরিচর্যা ও হাতের সাহায্যে পরাগায়ন করছে। অপরুপ দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে গেল।

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামে যেয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। আবু তালেব চাকরি ছেড়ে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল তিনি। পেঁয়াজের সাদা ফুলের কালো সোনায় কৃষক আবু তালেব বাজিমাত করেছেন এই চাষী। চলতি মৌসুমে ১৯ বিঘা জমিতে সুপার কিং, লালতীর কিং ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন তিনি।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৩৮ থেকে ৪০ মণ বীজ উৎপাদন হবে এমন প্রত্যাশা আবু তালেবের। এর বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪২ লাখ টাকা। খরচ বাদে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা মুনাফা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন এই কৃষক। ফলন বৃদ্ধি ও বীজের গুণগত মান রক্ষায় জমিতে সেচ প্রদান, মৌ বাক্স স্থাপন ও হাতের মাধ্যমে পেঁয়াজ ফুলের পরাগায়ন নিশ্চিত করেন তিনি।

কৃষক আবু তালেব জানান, রোপণ, পরিচর্যা, জমির ইজারাসহ প্রতি বিঘায় খরচ লেগেছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সব মিলে ১৯ বিঘা জমিতে বীজ চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ১৮-২০ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বীজ ঘরে তুলবেন তিনি। বিঘায় গড়ে দুই মণ করে ৩৮-৪০ মণ ফলনের প্রত্যাশা তাঁর। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ২-৩ হাজার টাকায়।

কৃষক আবু তালেব আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে চাকরি ছেড়ে ওই বছরই ১৬ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেন। সেখান থেকে অল্প অল্প করে চাষ শেখা ও স্বপ্ন বোনা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক বিঘা, দুই বিঘা করে বাড়তে থাকে তাঁর বীজ চাষ। ২০০৩ সালে ৭ বিঘা জমিতে বীজ চাষ করে বেশ লাভের মুখ দেখেন। এরপর গত বছর ১১ বিঘা জমিতে ১৮ মণ বীজ উৎপাদন করে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

পেঁয়াজের বীজ চাষে লাভও বেশি, ঝুঁকিও বেশি বলে মন্তব্য করেন আবু তালেবের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন। তিনি বলেন, মাঠ থেকে ফুল কেটে বাড়িতে এনে প্রথমে রোদে শুকানো হয়। এরপর মেশিনে মাড়াই করে পানি দিয়ে ধুয়ে আবার শুকিয়ে প্লাস্টিকের কনটেইনারে মজুত করা হয়। বপনের সময় কৃষকেরা চাহিদামতো ন্যায্য মূল্যে বাড়ি থেকে বীজ কিনে নিয়ে যায়।

এব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম জানিয়েছেন, কৃষকদের পেঁয়াজের বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আবু তালেব। তাকে দেখে অনেকেই এই চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমরা চাষীদের সার্বিক সহায়তা দিচ্ছি।