কেশবপুর (যশোর) সংবাদদাতা : পলিতে নদী ভরাটের কারণে উপচে পড়া পানিতে কেশবপুরের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অধিকাংশ পাট খেতে কোমর পানি বেঁধে যায়। জলাবদ্ধ পানিতে মরে যাচ্ছে পাটগাছ। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে কৃষকরা অপরিপক্ক পাট কেটে ফেলছে। এতে একদিকে যেমন কৃষক পাটের কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছেন না, অন্যদিকে পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এ উপজেলায় প্রতিবছর অপেক্ষকৃত উঁচু জমিতে ১৫ চৈত্রের পর ও বোরো ধান কাটার পর অর্থাৎ ১৫ বৈশাখের পর এ দুই সময়ে পাটের আবাদ করা হয়। চৈত্র মাসে বপণ করা পাটে খরার কারণে শ্রমিকের মজুরীসহ পানি সেচ বাবদ অন্যবারের চেয়ে এবার উৎপাদন খরচ বেশি দিতে হয়েছে। অপরদিকে, বৈশাখে বপণ করা পাটে আগাছা পরিস্কার করার পর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে যখন কৃষকরা সোনালী আঁশ ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর, ঠিক তখনই হঠাৎ বন্যায় কৃষকের সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। নিন্মাঞ্চলের অধিকাংশ পাট খেতে হাটু পর্যন্ত পানি বেঁধে যায়। পানির মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে একজন কৃষক এক শতকের বেশি জমির পাট কাটতে পারছে না। স্বাভাবিক মজুরির চেয়ে তাদের বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। অপরিপক্ক পাটে ফলনও ভালো হচ্ছে না।

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর এ উপজেলায় ৬ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৭ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৪ টাকা। কিন্তু জলাবদ্ধতায় ২৩৮ হেক্টর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক পাট কাটতে পারছেন না।

কাস্তা গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার বলেন, চলতি বছর বোরো ধান কাটার পর তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। প্রায় তিন মাসে পাটগাছ মাত্র ৭ থেকে ৮ ফুট উঁচু হয়েছে। এঅবস্থায় অতিরিক্ত বর্ষায় খেতে হাটু পানি জমে গেছে। জলাবদ্ধতায় কিছুদিন পর পাটগাছ মরতে শুরু করে। ফলে বাধ্য হয়ে অপরিপক্ক পাট কাটতে হচ্ছে। এতে কাঙ্খিত ফলন হবে না। পাটের ভালো দামও পাওয়া যাবে না।

ভালুকঘর গ্রামের কৃষক বারিক বলেন, বোরো আবাদের পর তিনি বুড়িভদ্রা নদীর চরে ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। অকাল বন্যায় পাট খেতে বুক সমান পানি বেঁধে গেছে। জলাবদ্ধতায় পাটগাছ মরে যাচ্ছে। বেশি পানির কারণে কোনো কৃষি শ্রমিক পাট কাটতে রাজি হচ্ছে না। তাই হাজার হাজার টাকা খরচ করেও পাটের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সাবদিয়া গ্রামের কৃষক খোকা বলেন, তিনি বুড়িভদ্রার চরে ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেন। পানির কারণে তিনি পাটের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু বারিক ও খোকাই নয়, তাদের মতো শত শত কৃষক বুড়িভদ্রা নদীর চরে পাট আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জলাবদ্ধতায় ২৩৮ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে। বীজ বপনের পর ১২০ দিন হলেই পাট পরিপক্ক হয়। ভাদ্র মাসের শেষের দিকে কাটলে কৃষকরা পরিপক্ক পাট পেতেন। কিন্তু পানির কারণে আগেভাগেই পাট কেটে ফেলছেন। এতে কৃষকরা ভালো ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।