এম, এ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : শাহজাদপুরে হাঁস পালন ও খামার করে বেকারত্ব দূর করেছে অনেকেই। শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বেকার যুবকেরা হাঁসের ছোট বড় অসংখ্য খামার গড়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করছেন। বিশেষ করে যমুনা চরের গ্রামগুলিতে ব্যাপকভাবে পালন হচ্ছে হাঁস। যমুনা চরের গ্রামে কোথাও ধু ধু বালু চর আর কোথাও আঁকা বাঁকা নদীর মোহনা ও সমতল জমি থাকায় এখানে হাঁস প্রতিপালন অনেকটাই সহজ। চারদিকে নদী-খাল থাকায় প্রচুর শামুক পাওয়া যায় এখানে। যা হাঁসের প্রধান খাদ্য। এর মাধ্যমে দারিদ্র্যকে জয় করে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে বহু পরিবার। চরগুলোতে সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে প্রতিটি পরিবারেই প্রায় গড়ে উঠেছে হাঁসের খামার। এসব খামারে উৎপাদিত ডিম যমুনা চরের হাট-বাজার হয়ে চলে যায় শহরের দোকানগুলোতে। আর সম্প্রতি চরাঞ্চলে বেকারত্ব দূর করতে হাঁস পালনে আগ্রহ বাড়ছে বেকারদের। এছাড়াও উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের পোতাজিয়া, রাউতারা, বড় বায়ড়া, রেশমবাড়ী, চরা চিথুলিয়া, কাকিলামারি, মাদলা, কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ আঙ্গারু, চর আঙ্গারু, বনগ্রাম, সরাতৈল, চিনাধুকুরিয়া, রুপবাটি ইউনিয়নের আহম্মদপুর, মোয়াকোলা, কলিয়রচর, আন্দারমানিক, সন্তোষা, নরিনা ইউনিয়নের চর নরিনা, জয়রামপুর, বাতিয়া, গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর, বারইটেপড়ি, নবীপুর, গাড়াদহ, কৈজুরী ইউনিয়নের ঠুটিয়ার চর,ভাট দিঘুলিয়ার চর,জগতলার চর, সোনাতনী ইউনিয়নের বানতিয়ার, ছোট চাঁনতারা,বড় চাঁনতারা,ধীতপুর, শ্রীপুর ও সোনাতনীর চর, গালা ইউনিয়নের রতনদিয়ার চর, বাঙালার চর গ্রামের বেকার যুবকরা হাঁস লালন পালন ও ছোট বড় অসংখ্য খামার গড়ে তুলেছে। এতে ভাগ্য বদলেছে এখানকার বহু পরিবারের। বসত ঘরের পাশে নেট (জাল) দিয়ে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। প্রতিটি খামারে ১শ’ থেকে ১ হাজার হাঁস রয়েছে। এসব খামারে কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করছে।

রতনদিয়ারের হাঁসখামারী আয়মালা বেগম জানান, তিনি গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঁস পালন করে আসছেন। বসত ঘরের পাশের জমিতে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। প্রথমে ৫০টি হাঁস দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার প্রায় ৪শ’ হাঁস রয়েছে। দৈনিক প্রায় ১শ’ ডিম হয় তার খামারে। ১শ’ ডিম ১৫শ’ টাকা মূল্যহারে পাইকারী বিক্রি হয় দৈনিক।

ভাটদিঘুলিয়ার ইউপি সদস্য মো. বাবলু আক্তার বলেন, আমাদের আশে পাশের কয়েক গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই হাঁস পালন করছে অনেক পরিবার। তবে সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাঁস পালনে স্বল্প খরচ হওয়ায় অনেকেই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। তবে সরকারি ভাবে সহযোগীতা বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হাঁস পালনে বিপ্লব ঘটাতে পারে। সোনাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, যদিও যমুনা চরের মানুষ কৃষি কাজ ও মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত। আবার কেউ কেউ গবাদি পশু-পাখি পালন করে। বহু পরিবার হাঁস পালনের সাথে সম্পৃক্ত।

প্রতিটি পরিবারই এখন অভাবকে জয় করেছে। পারিবারিকভাবে প্রায় প্রতিটি বসত ঘরে হাঁস লালন করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে বর্তমানে হাঁস পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতে করে বদলে যাচ্ছে অনগ্রসর ও পিছিয়েপড়া এই জনগোষ্ঠির জীবনমানসহ।