অপরিপক্ব ও কৃত্রিমভাবে পাকানো!

খুলনা মহানগরীতে ফলের বাজারে মওসুম শুরু হতে না হতেই পাকা আমে সয়লাব। পাইকারী আড়ৎ ও খুচরা আম ব্যবসায়ীদের দোকানে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের ফল। তবে অন্যন্যা বছরের মতো এবারও রাসায়নিক দিয়ে আম পাকানোর অভিযোগ উঠেছে। যার ক্রেতা সংখ্যা ও কোন অংশে কম নয়। এ ব্যাপারে এক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, এখন যে আম বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো কোন স্বাদ থাকে না। তবুও তারা জেনে বুঝে সেই কেমিক্যালযুক্ত আম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও উৎপাদন বাণিজ্য বিশেষ করে ভোক্তাদের চাহিদার ক্ষেত্রে কয়েকগুণ এগিয়ে আছে ফলের রাণী আম। উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের তথ্য মতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ২১ জাতের আম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে অর্ধেক আম উন্নত প্রজাতির। মূলত মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস আমের মৌসুম থাকে। সবচেয়ে বেশি আম গাওয়া যায় জুন থেকে জুলাই মাসে। তবে কোন আমটি কোন সময় পাওয়া যাবে সে বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষের সঠিক কোনো ধারণা নেই।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এখন বৈশাখ মাস শেষ হয়ে জৈষ্ঠ মাস শুরু। বাংলাদেশে মৌসুমকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, আগাম জাত মৌসুম এবং নাবি জাত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি যে আমগুলো বাজারে আসার কথা সেগুলো গোপালভোগ, গোবিন্দ, বৃন্দাবন, রামসাগর, ক্ষিরসাপাত।জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শুরু বাজারে আসছে গারে ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, লক্ষণভোগ, খুদি খিরসা, বাড়ি-২, মুম্বাই ও সূর্যপুরী ইত্যাদি। জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফজলি, আম রুগালি, মোহনভোগ, আশ্বিনা ও গৌড়মতি। যেটি বাঙালীর কাছে নানা সুস্বাদু ফলের মাস হিসেবে পরিচিত। এ মাসের শুরু থেকেই বাজারে আসে আম, লিচু, জাম, কাঁঠালসহ নানা সুস্বাদু ও রসালো মৌসুমী ফল। গোবিন্দ ভোগ,গোপাল ভোগ,হিমসাগর, ল্যাংড়া,আম রুপালি, ফজলি জাতের আম নামানোর পালা।

জেলা প্রশাসকের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও বিভিন্ন উপজেলায় আমপাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে জেলার কোনো বাগানেই এখনো আম পাকেনি।

সাতক্ষীরা ও রাজশাহীর অপরিপক্ক আম আসছে খুলনার বাজারে কিন্তু ক্রেতারা আমের এ ক্যালেন্ডার সম্পর্কে কতটা সচেতন, কিংবা বাজারে আম কেনা নিয়ে তাদের মনোভাবই বা কেমন? জবাবে মহেশ্বরপাশার অধিবাসী দীলিপ কুমার বলেন, ‘আমার প্রিয় ফল আম। এখন আমের মৌসুম। কিন্তু বর্তমানে বাজারে যে আম আসছে তা রাসায়নিক (ফরমালিন) পদার্থ দিয়ে পাকানো হচ্ছে। আমি আগে শুনি কোন কেমিক্যাল দেয়া কিনা বা গাছ থেকে পাড়া ভালো আম কি-না। তাই আমি বছরের শুরুর দিকে পাকা আম কিনি না।

দৌলতপুর মুহসিন মোড় কাঁচাবাজারের কাঁচামাল ও আম ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখন এ সময় মেডিসিন ছাড়া কিভাবে আম বাজারে আসবে। তিনি বলেন আমি জেনেছি সাতক্ষীরায় থানাকে ম্যানেজ করে কিছু আম ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি শুরু করেছে। গাছ থেকে আম পাড়ার ক্যালেন্ডার ঠিক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ তিনি বলেন, ক্যালেন্ডার ঠিক করলেও তার মনে হয় অসাধু ব্যবসায়ীরা ফরমালিন ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করেনি। একই এলাকার ফারজানা রহমান জানালেন, তার উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখি মেডিসিন দেয়া। বুঝতে পারিনা যে কোন ফল খাবো। এ সব নিয়ে ভয়ে থাকি”।

দৌলতপুরে ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান বলেন, এখন যে আমটি আমরা বিক্রি করছি সেটি সাতক্ষীরার গোপাল ভোগ, গোবিন্দ ভোগ আম ও হিমসাগর।

পাইকারি বাজার ফলের আড়ৎ থেকে রানা ফল ঘর, সাব্বির ফল ভান্ডার, কুদ্দুস ফল ভান্ডার ও শাহীন ফল ঘর খুলনা স্টেশন রোডের কদমতলার পটাইকারী আড়ৎ তাদের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। তারা কি দিয়ে কিভাবে পাকিয়েছে আমরা সেটা আসলে বলতে পারব না বলে জানান।