মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পেঁয়াজের গুটি হওয়ার আগেই মরে যাচ্ছে আগা, ফলে ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে চাষিরা। আশা ছিল মাসখানেক পরেই পেঁয়াজ ঘরে তুলবে কৃষকরা। এখন পেঁয়াজে গুটি নামার সময়। গাছের আগা মরে গেলে গুটি ছোট হবে। আর ফলনও হবে কম । সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির পর থেকেই গাছের আগা মরে যাচ্ছে। কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছেনা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া মাঠে পেঁয়াজের চাষি কামাল হোসেন আক্ষেপ করে বললেন, ‘কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের মাথা মুচমুচে কালো ছিল। তখন প্রত্যাশা ছিল ৩০ কাঠা (৫০ শতাংশ) জমিতে অন্তত ৮০-৯০ মণ ফলন হবে। কিন্তু হঠাৎ গাছের আগা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। গত ১০ দিনে পঁচিশ’শ টাকার বিভিন্ন কোম্পানির নামিদামি কীটনাশক ছিটিয়েছি। কৃষি কর্মকর্তাকেও ডেকে এনেছি। তবুও আগা মরা বন্ধ হয়নি।

কৃষক মনছুর আলী বলেন, কিছুদিন আগে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির পর থেকেই গাছের আগা মরে যাচ্ছে। কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছেনা। তার ১৫ কাঠা জমিতে গত বছর ৪০ মণ পেঁয়াজ হয়েছিল। এবার ১৫ মণও ফলন হবেনা বলে মনে করছেন।

জানা গেছে, পেঁয়াজের চারা রোপনের দুইমাস হয়েছে। এখন পেঁয়াজের গুটি নামার সময়। আর মাত্র ২০-৩০ দিন পরে পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শেষ মুহুর্তের পরিচর্চায় ব্যস্ত কৃষকরা। তবে হঠাৎ উপজেলার দুই-তৃতীয়াংশ কৃষকের পেঁয়াজ ক্ষেতের আগা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-২০ মণ ফলন কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

জমির ইজারা, জমিচাষ, বীজ বপণ, চারা রোপন ও পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ প্রতিবিঘা পেঁয়াজ চাষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ লেগেছে। ৫০ থেকে ৬৫ মণ ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল চাষিদের। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হালকা বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে পেঁয়াজ গাছের আগা মরে যাচ্ছে। এতে ফলন ও লাভ নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। কৃষি কর্মকর্তার দাবি, বৃষ্টি নয়, হঠাৎ তাপ বেড়ে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে পেঁয়াজের আগা। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষিকর্মকর্তারা।

এদিকে কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মামুুনুর রশিদ বলেন, ফসলের ক্ষতি হওয়ার মতো তেমন আবহাওয়া এখনও হয়নি। তুলনামূলকভাবে গতবারের তুলনায় তাপমাত্রা কম আছে। গড়ে ৩০-৩২ ডিগ্রিসেলসিয়াস তাপমাত্রা চলছে।

সরেজমিন উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও চাপড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ গাছের মাথা লালচে ভাব হয়ে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা মাথা মরা ঠেকাতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। তাদের চোখে মুখে হতাশা আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষীপুর বিলের কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, যেভাবে গাছ মরে যাচ্ছে। তাতে ফলন অর্ধেক কমে যাবে বলে তার ধারণা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমান ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর। তারমধ্যে ২০২৩ - ২০২৪ অর্থবছরে চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ভাল দাম পাওয়ায় এবারো পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষাবাদের প্রত্যাশা করছে কৃষিবিভাগ।