শাহিনুর রহমান সুজন (চারঘাট), রাজশাহী: বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র প্রকল্পের সরকারি ভর্তুকির পানি যাচ্ছে প্রাইভেট মৎস্য খামারে। এর ফলে পানি বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। এই পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজশাহীর চারঘাটে।
চারঘাট উপজেলার শলুয়া-বালুদিয়াড় বিল একসময় ছিল চাষযোগ্য ফসলি জমি। দেড় যুগ আগে বিএমডিএ এখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিল কৃষকদের সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য। সে সময় এই এলাকার আশপাশে কোনো পুকুর ছিল না। এখন এই নলকূপের আওতায় মাত্র ১৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ হলেও প্রায় ১১৫ বিঘা জমি পুকুরে রূপান্তরিত হয়ে মাছ চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু শলুয়া-বালুদিয়াড় বিল নয়, চারঘাট উপজেলার চৌধুরীর বিলেও একই চিত্র। এখানে দেড় যুগ আগে গভীর নলকূপ স্থাপনের সময় মাত্র দুটি পুকুর ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই নলকূপের আওতাধীন প্রায় ৯৫ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। ফলে, এই এলাকায় বোরো ধান চাষ হয়েছে মাত্র পাঁচ বিঘা জমিতে, আর মাছ চাষ হয়েছে শতাধিক বিঘা জমিতে। উপজেলায় বিএমডিএ’র স্থাপিত ৬৪টি গভীর নলকূপের আশপাশে ফসলি জমির পরিবর্তে হাজার হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। সরকার কৃষকদের সেচ সুবিধা দিতে গভীর নলকূপের পানিতে বিদ্যুৎ খরচে ভর্তুকি দিলেও, সেই সুবিধা কৃষকদের চেয়ে বেশি পাচ্ছেন মৎস্য খামারিরা। পানির সহজলভ্যতা ও কম দামের সুযোগ নিয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করছেন। ফলে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে, পাশাপাশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০২টি। এক যুগ আগে পুকুরের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৩০টি, যা অর্ধযুগে ৬৪০টি এবং এক যুগে ১ হাজার ৪৭২টি নতুন পুকুর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পুকুরগুলোর বেশিরভাগই গভীর নলকূপ সংলগ্ন এলাকায় খনন করা হয়েছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তথ্য অনুযায়ী, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপে ব্যবহৃত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট মূল্য ৪ টাকা ৮২ পয়সা। অন্যদিকে, মৎস্য খামার ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় থাকায় তাদের জন্য বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট মূল্য ৯ টাকা ৮৮ পয়সা, যা প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু গভীর নলকূপের পানিতে ভর্তুকির সুযোগ নিয়ে মাছ চাষিরা কম খরচে পানি সংগ্রহ করছেন, যা প্রকৃত কৃষকদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, কৃষকদের প্রধান সমস্যা হলো সেচের পানি। অথচ তাদের ভর্তুকির পানিতে মৎস্য খামার গড়ে উঠছে। ফলে কৃষকরা বিকল্প উপায়ে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চারঘাট জোনের সহকারী প্রকৌশলী হানিফ শিকদার জানান,
গভীর নলকূপের পানি শুধুমাত্র কৃষিজমিতে ব্যবহারের কথা। কিন্তু বাস্তবে তা মৎস্য খামারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।