টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা : মুন্সীগঞ্জ জেলায় আলুর বাজারে ভয়াবহ ধস নেমেছে। উৎপাদনে কেজি প্রতি ২৮ টাকা ৩০ পয়সা খরচ হলেও কৃষকরা পাচ্ছেন মাত্র ৭ টাকা ৬০ পয়সা। ফলে প্রতি কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা ৭০ পয়সা। এক বস্তা (৫০ কেজি) আলুতে জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক, পরিবহন ও কোল্ড স্টোরেজসহ মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৪১৫ টাকা। অথচ এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকায়। এতে প্রতি বস্তায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে গড়ে ১,০৩৫ টাকা।

মান্দ্রা গ্রামের কৃষক শাহীন শেখ বলেন, “২০ কানি জমিতে আলু আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত আমার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫০ লাখ টাকা লোকসান হবে। সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো, নয়তো কৃষকরা ধ্বংস হয়ে যাবে।”

টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মটুকপুরে অবস্থিত ইউনুছ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার জানান, “আমাদের হিমাগারে এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৯৪ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিক্রির জন্য এখন পর্যন্ত বাহির করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৩১ বস্তা। বাকি ৮০ হাজার ৬৩ বস্তা আলু এখনো হিমাগারে পড়ে আছে। দাম না থাকায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, গত বছর এই সময়ের মধ্যে হিমাগারের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আলু বিক্রি হয়ে যেত, কিন্তু এবার বাজারে চাহিদা না থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জে বর্তমানে ৬৫টি কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুত রয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে খাবার আলু ২ লাখ ৯ হাজার ৬৬৭ মেট্রিক টন এবং বীজ আলু ১ লাখ ৬ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন। বর্তমানে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮ থেকে ৯ টাকা, পাইকারি বাজারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা, আর খুচরা বাজারে ১৭ থেকে ১৮ টাকায়।

কৃষকরা বলছেন, “বাজারে দালাল ও মজুদদারদের কারণে ন্যায্যমূল্য আমরা পাচ্ছি না। দাম বাড়লে সবাই লাভবান হয়, কিন্তু কমলে পুরো ক্ষতি আমাদেরই।”

কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার যদি জরুরি ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনে এবং কৃষকদের জন্য সহায়তা ও ভর্তুকি ঘোষণা না করে, তবে আগামী মৌসুমে আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ মারাত্মকভাবে কমে যাবে।

সবশেষে প্রশ্ন থেকেই যায় -আলুর দাম কমে গেলে ক্ষতির বোঝা বইবে কে? কৃষক ছাড়া আর কেউ নয়!