কলারোয়া (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা : কলারোয়ায় সাদা পলিথিন সেডে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন চাষীরা। অসময়ের এই ফসল চাষ করে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি স্থানীয় বাজার ও জাতীয় পর্যায়েও টমেটোর চাহিদা মেটাচ্ছেন। মাঠ থেকে পিকাপে সরাসরি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টমেটো সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবার জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,কলারোয়ার বামনখালী মাঠে এখন চোখে পড়েছে ভিন্ন দৃশ্য। উপরে সাদা পলিথিনের সেড, নিচে বেডে সারি সারি সবুজ টমেটো গাছ। দুই পাশে রয়েছে ড্রেন যেখানে বর্ষার পানি জমতে পারে না। এতে পোকামাকড়ের ক্ষতির আশঙ্কাও খুব কম। ফলে টমেটো গাছগুলো সুস্থভাবে বেড়ে উঠেছে। কৃষকরা বলছেন, পলিথিন ব্যবহারের ফলে বৃষ্টির পানি সরাসরি গাছে পড়ে না। ফলে গাছগুলো রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকে । যাতে করে টমেটোর ফলনও খুব ভালো পাওয়া যায়। আর এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা টমেটো চাষে ঝুঁকে পড়েছে।

স্থানীয় টমেটো চাষীরা জানান, গত বছর কিছুটা ক্ষতি হলেও এবছর ফলন ভালো হয়েছে। আর বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মাঝে নতুন করে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। বাজারে অসময়ের টমেটোর চাহিদাও বেশি। সরবরাহ বেশি হওয়ায় দামও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। এই টমেটো বিক্রি করে কৃষকের হাতে আসছে নগদ টাকা। যাতে করে এলাকায় চাষীরা অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠেছে। বৈদ্যপুর গ্রামের চাষী লাভলু বলেন, আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। এতে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এবার প্রায় ১৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। এতে করে দেখা গেছে খরচ বাদে প্রায় দ্বিগুন টাকা লাভ হবে।আর এক চাষী রেজাউল জানান, গত বারের চেয়ে এবার টমেটোর ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদাও বেশি হওয়ায় ভালো দাম পাওয়ায় আশা করছি।

এ ফসল চাষে শুধু চাষীরা লাভবান হচ্ছেন তাই না এলাকার খেটে খাওয়া মানুষও উপকৃত হচ্ছেন। ক্ষেতের পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার, টমেটো সংগ্রহ ও পরিবহন সব মিলিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই মৌসুমী কাজ করে সংসারের আয় বাড়াতে সহায়তা করেছে। এতে এলাকার শ্রমিকরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম এনামুল ইসলাম জানান, এ বছর কলারোয়ায় ৯৩ হেক্টর জমিতে বারি-৮ জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। এ জাতের টমেটো স্বাদে ভালো, বাজারে চাহিদাও বেশি । আর এই গুলো সংরক্ষণযোগ্য হওয়ায় কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, চাষীদের মধ্যে এর আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগামী দিনে আরও বেশি জমি এই চাষের আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে টমেটো চাষে লাভবান হয়ে অনেকেই নিচু জমি ভরাট করে নতুন করে ক্ষেত তৈরির করার পরিকল্পনা করছে। কেউ কেউ মাছ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে টমেটো চাষ করে দ্বিগুণ আয়ের স্বপ্নও দেখছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, কলারোয়ায় সাদা পলিথিনের সেডে টমেটো চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, শ্রমিকরা পাচ্ছেন কর্মসংস্থান আর সাধারণ ক্রেতা পাচ্ছে নিরাপদ টমেটো। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কলারোয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদনে দেশের শীর্ষে চলে যাবে বলে আশা করছেন অনেকে।