কৃষি
খুলনায় প্রণোদনার অভাবে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা
কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকায় প্রতিবছর সূর্যমুখিতে স্বপ্ন বুনেন খুলনার হাজারও চাষি। লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটাসহ জেলার প্রায় সব উপজেলায় এবার সূর্যমুখির
Printed Edition

কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকায় প্রতিবছর সূর্যমুখিতে স্বপ্ন বুনেন খুলনার হাজারও চাষি। লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটাসহ জেলার প্রায় সব উপজেলায় এবার সূর্যমুখির আবাদ কমেছে। খুলনা জেলায় চলতি বছর ১ হাজার ৮শ’ ৫৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে মাত্র ৪৬০ হেক্টর জমিতে। গত বছর থেকে প্রণোদনা কমেছে ৯৭ শতাংশ। ফলে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়েছে কৃষক।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সূর্যমুখি চাষ হয় ১ হাজার ৮শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর গত বছরের লক্ষমাত্রা ধরা হলেও এখন পর্যন্ত ৪ শত ৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। সূর্যমুখীর চাষ বৃদ্ধিতে এবার বিঘা প্রতি ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি, ১০ কেজি ডিএপি স্যার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জেলায় মোট প্রণোদনা দেয়া হয় ১ হাজার ৭শত ৮৭ হেক্টর জমিতে, যার আর্থিক মূল্য ৩২ কোটি ৪৬ লক্ষ ১হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এবার প্রণোদনা দেয়া জমির পরিমাণ ৪৬ হেক্টর, যার আর্থিক মূল্য ৮০ লক্ষ ১ হাজার টাকা।
খুলনা জেলার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রা উপজেলায় এবার চাষাবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া পাইকগাছায় ৮৬ হেক্টর, দাকোপে ৪০ হেক্টর, তেরোখাদায় ১৪ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ১২০ হেক্টর, ফুলতলায় ২৫ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ২০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ২০ হেক্টর, রূপসায় ৭০ হেক্টর, মেট্রো লবণচরায় ১২ হেক্টর, মেট্রো দৌলতপুরে ৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
কয়রা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার সূর্যমুখি চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০ মেট্রিকটন। যা গত বছরের থেকে ৯০ মেট্রিকটন কম। চলতি মওসুমে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে।
কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার, কয়রায় গেল বছরের থেকে এবার ছাষাবাদ কম হয়েছে। চাষিদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শের পাশাপাশি স্যার ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে। এবার কয়রার কৃষকরা বারি সূর্যমুখি ও টিএসএফ-২৭৫ জাতের সূর্যমুখি উৎপাদন করছে।
আমাদি ইউনিয়নের চন্ডীপদ মন্ডল বলেন, আমি ১৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। ২৫-৩০ বছর ধরে লবণাক্ত এ জমি পড়ে থাকতো। আমন ধান ছাড়া আর কোনো ফসল এখানে হতো না। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সূর্যমুখী ফুল চাষের পরামর্শ দেয়। তারাই জমির চাষাবাদের খরচ, সার, বীজ ও কীটনাশক দিয়েছে। তবে গতবার থেকে এবার কম জমিতে সূর্যমুখি লাগিয়েছি, কিছু জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি।
পাইকগাছা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ৮৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩০৫ হেক্টর। এবার ৬শত কৃষককে কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা একরামুল হোসেন চাষাবাদ কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানান, অধিকাংশ জমিতে জো আসতে দেরি হওয়ায় চাষের সময় চলে গেছে। তা ছাড়া বীজের দাম বেশি হওয়ায় প্রণোদনা ছাড়া কেউ সূর্যমুখী চাষ করতে চায় না।
পাইকগাছা উপজেলার কৃষক অরবিন্দ জানান, গত বছর ১৬ শতাংশ পতিত জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলেন তিনি। কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় এবার দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছেন এই কৃষক।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, ১ মণ সূর্যমুখীর বীজ থেকে ১৮-২০ কেজি তেল উৎপন্ন হয়। প্রতি কেজি তেল বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এ ফসল উৎপাদনের আগ্রহ বাড়ছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ বছর প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৩২০০ বিঘা জমিতে হাইব্রীড জাতের বীজ ও সার সরবরাহ করেছি। গত বছর প্রণোদনা বেশি ছিল। এবার কম সংখ্যক কৃষককে দেয়া হয়েছে। এজন্য আবাদ কম হয়েছে। প্রণোদনা ছাড়া কৃষকরা সূর্যমুখী আবাদ তরতে চায় না। কারণ বীজের দাম বেশি। বারি-৩ জাতের সূর্যমুখির একটি জাত রয়েছে, এই বীজটি আমরা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। এই জাতের সূর্যমুখী আবাদ হলে কৃষকরা সহজে এর বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে।