মোঃ রফিকুল ইসলাম, (কালিগঞ্জ) সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জ এলাকায় এখনো পুরাপুরি আমন ধান কাটা শুরু হয়নি কারণ এবার বর্ষার চাপ বেশী থাকার কারণে আমন ধানের চারা লাগাতে দেরী হয়েছে কৃষকদের। তারপরেও কালিগঞ্জের আমন চাষীরা দৈনিক সংগ্রামকে জানান, ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও এলাকার চাষীরা এবার আরও বেশী জমিতে তাঁরা আমন চাষ করেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর-২৫ এর মধ্যে পুরাপুরি আন ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। নলতা ইউনিয়নের কাজলা-কাশিবাটী গ্রামের আমন কৃষক মোবারক আলী জানান, তিনি বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন এবং ভালোই দাম পেয়েছেন, তবে অন্যান্য কৃষকরা লাভ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে সামান্য কিছু কৃষক পাকা আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এবং ফলনে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন।
তবে কৃষকদের মূল অভিযোগ দাম নিয়ে, যা অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা অথ্যাৎ ৬০ কেজি ধান ১৮০০-২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, ধানের দাম না বাড়লেও সবকিছুর দাম বেড়েছে, এতে লাভবান হওয়া কঠিন। তাদের মতে, প্রতি বিঘায় খরচ ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা হলেও ধান ও বিচলি (খড়) বিক্রি করে সেই টাকা উঠছে না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ, নার্সারি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কালিগঞ্জ উপজেলার এক শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ মৌসুম শুরু হলে, দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, এ বছর বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় কৃষকদের সেচ খরচ কম হয়েছে, যদিও কৃষকরা উৎপাদন খরচ বাড়ার কথা বলছেন। উপজেলায় এ বছর প্রায় ১৭ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। যেখানে ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯৩ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টন। শেষ মুহূর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা ভালোভাবেই ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
কয়েকদিন পূর্বে ও ভাড়াশিমলা উউনিয়নের শুইলপুর মাঠ ছিল সবুজের সমারোহের বেড়াজালে। তারপর হলুদাভাব, স্নিগ্ধ হওয়ায় মন মাতানো উদাসী দোলায় মাঠময় ঝিকিরমিকির এক অন্য প্রকৃতি দেখতে দেখতে সবুজ, আর হলুদাভাবের সেই গোছায় গোছা ধান গাছ পাকা ধানে পরিপূর্ণতা পেয়ে বর্তমানে তা কৃষকের ঘরে যেতে চলেছে। পাকা ধান কাটার শুরু হয়েছে মহাউৎসব, এ দৃশ্য কালিগঞ্জের দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠে। শস্য ভান্ডার উপজেলার কৃষকরা তাদের স্বপ্ন সাধ পুরনে ব্যস্ত, অবিরাম, ক্লান্তহীন ভাবে কেটে চলেছে আমন ধান। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোদমে চলছে ধানকাটা, গোছানো। মহা ব্যস্ততায় কৃষকরা। কাকডাকা ভোরে আবার কেউ কেউ সকালে গাতার খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কেটেই চলেছে দৃশ্যতঃ কালিগঞ্জ গ্রামীন অর্থনীতিতে আমন ধান নির্ভর অর্থনীতির সুবাতাস বইছে। কৃষক এবং কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ধান কাটা, বাছা, গোছানো এবং মাড়াই করার কাজে নিয়োজিত। উৎপাদনের ঘাটতি নেই, বলা চলে এবার কালিগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু ধানের দাম কিছুটা কম এমন হতাশা ময় কথা বললেন কৃষক আনিছুর রহমান। তিনি জানান, বীজ সার কিছুটা কৃষি দপ্তর হতে বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও শ্রমিক মজুরী সহ অপরাপর খরচ পরবর্তি খুববেশী লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান সময়ে আমন ধান ওঠা শুরু হওয়ায় ধানের বাজার কিছুটা নিন্মমুখি, কোন কোন এলাকায় বস্তা প্রতি পনেরশত। কৃষকরা ধানের পাশাপাশি বিচুলী বিক্রয়ে অর্থ পাচ্ছে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন ধানকাটা মাঠ পরিদর্শনে দেখা গেছে ক্ষেতে মধ্যেই কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করে সেখান থেকেই চিক্রি করছে। তবে এমন দৃশ্য খুব কম, অধিকাংশ কৃষক ধান কেটে বাগের সাহায্যে ছাড়াও পা ও মোটর ভ্যান, ইঞ্জিন ভ্যান, সহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়ীতে নিচ্ছে। আমন ধানের সোদা গন্ধে গ্রামের মেঠো পথ হতে শুরু করে কৃষকের বাড়ি পর্যন্ত মৌ মৌ সুসভিত গন্ধে ভরপুর। কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীরাও মহাব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে। ধান সিদ্ধ, শুকানো এবং মাড়াই করার জন্য প্রস্তুত করতে কৃষাণীরা গভীর রাতে উঠছে সূর্য উঠতে না উঠতে ধান সিদ্ধ শেষ করে দৌড়ে শুকাচ্ছে। ধান, সিদ্ধ, রৌদ্রে শুকানো, মাড়াই করা সব মিলে গ্রামীন জনপদ এক ধরনের কমংযজ্ঞে চিত্র চিত্রায়িত হচ্ছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে মহাজন সহ বিভিন্ন এনজিও হতে ঋণ গ্রহণ করে ধান চাষে নেমেছে। আমন ধান ঘরে তুলেছে কিন্তু ঘরে থাকার সুযোগ কই? ধান বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করছে এবং বাদ বাকি ধান সারা বছরের খোরাকির জন্য রাখতে হচ্ছে। আমন ধানের চালের আটার মেহমানদারী এবং আথিথেয়তা হবে। শীত পড়তে শুরু করেছে। গ্রামীন জনপদে শীতের সময় গুলোতে পিঠা পায়েস তৈরীর ধুম পড়ে এই ধানের উপস্থিতি পিঠা পায়েসের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। সবমিলে কৃষক খুশি, লাভ লোকসান বড় কথা নয়, নতুন ধান উঠেছে তাই সর্বত্র বইছে আনন্দ স্রোত। ধান চাষে লাভবানই হচ্ছে কৃষকরা, তবে আরও বেশী লাভবান হতেন যদি না প্রনোদনা এবং বিনা সুদে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা হতো।