খুলনাঞ্চলে বোরো ধান কর্তন শেষের পথে। ফলনও ভালো হয়েছে। মাথায় অথবা ভ্যানে করে ধান বহন ও মাড়াই কাজে কৃষক, কৃষানী ও ক্ষেতমজুরেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফড়িয়ারা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ধান কিনছেন। বিক্রি শুরু হয়েছে হাটেও। সম্প্রতি ফড়িয়ারা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। অবস্থাপন্ন কৃষকেরা আপাতত ধান বিক্রি না করলেও গরীব চাষিরা ধার-দেনা মেটাতে এবং সংসার খরচ চালাতে স্বল্প দামে ধান বেঁচতে বাধ্য হচ্ছেন।

রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের যুগিহাটী গ্রামের কৃষক মো. রাকিব হোসেন ঢালী একটি সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে অপরের দু’বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। এই বর্গাচাষি স্থানীয় একটি দোকান থেকে গোটা মওসুমের সার ও কীটনাশক বাকিতে কিনেছিলেন। তিনি বলেন, সপ্তাহ দেড়েক আগেও ফড়িয়ারা মোটা ধান ১২শ’ এবং চিকন ধান ১৩শ’ টাকা মণ দরে কিনেছেন। এখন তারা মোটা ধান এক হাজার ২০-৫০ টাকা মণ এবং চিকন ধান ১১শ’৫০ টাকা দামে কিনছেন। ফড়িয়াদের কেউ এর বেশি দামে কিনতে রাজি নন। সার-কীটনাশকের দোকানের বকেয়া টাকা পরিশোধ, সমিতির কিস্তিসহ সংসার চালাতে তিনি কম দামে ধান বেচতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক ফড়িয়াদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে দাম কমানোর অভিযোগ তুলেছেন।

জামাল নামে এক ফড়িয়ার কাছে ধানের দর-দাম জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন। যদিও অরেকটি সূত্র বলছেন, তারা চাল কল মালিকদের নির্ধারিত দামের সাথে সমন্বয় করে ধান কিনে থাকেন।

প্রায় একই রকম অবস্থা বিভিন্ন স্থানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বর্গা চাষির। বৃষ্টির পানি নির্ভর আমন মৌসুমে ফসলের আধা-আধি ভাগ হলেও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগ হয়। জমির মালিকের পাশাপাাশি সেচ যন্ত্রের মালিকেরাও আরেক ভাগ পান। ফলে বর্গাচাষিরা আমন অনুপাতে বোরোতে কম ধান পান। তার ওপর ফড়িয়াদের কাছে আশানুরূপ দামে ধান বেঁচতে না পেরে তারা বিপাকে আছেন।

অন্যদিকে, অবস্থাপন্ন চাষিরা এখন ধান গোলায় তুলে রেখে পরে দাম বাড়লে বিক্রি করেন। বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জেলার নয় উপজেলাসহ মেট্রো অঞ্চলে মোট তিন লাখ ১৭ হাজার ২শ’ ৭৪টি কৃষক পরিবার আছে। এরমধ্যে বড় চাষি পরিবারের সংখ্যা মাত্র ৮ হাজার ৩শ’।

অন্যদিকে, প্রান্তিক চাষি পরিবার ১ লাখ ৮ হাজার ৫শ’ ৯৪। ক্ষুদ্র জমির মালিক পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ৫শ’ ৫৬। ভূমিহীন কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৪২ হাজার ৮শ’ এবং মাঝারি কৃষক পরিবার ৩৮ হাজার ৭শ’ ৮১। সংখ্যাগরিষ্ঠ এসব কৃষকরাই মূলত বর্গাচাষি। যারা অনেকেই নিজের জমির পাশাপাশি অপরের জমিতে ফসলের ভাগের চুক্তিতে চাষাবাদ করেন। তারা ধান, সবজিসহ অন্য ফসল আবাদ করেন। যদিও সুনির্দিষ্টভাবে ধান চাষিদের সংখ্যা কৃষি অফিস কর্তৃপক্ষের সংরক্ষণে নেই।